কলকাতা: শিশু মনের তল পাওয়া কি চারটি খানি কথা? ওরা কী চায়, কী করে, কী বা ভাবে ওরাই জানে। অতল সে মনের ঝাঁকি দর্শন অত সোজা নয়। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের এজলাসে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইলেন ধর্মাবতার থেকে উপস্থিত সকলে। চার বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে মামলা চলছে। যে মেয়েকে জন্মের পর বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, এখন তিনিই দাবি করছেন মেয়েকে ফিরে পাওয়ার। এদিকে পালিকা মা যে মেয়েকে ছাড়তে চান না। সে মামলারই শুনানি ছিল এদিন। শুনানি চলাকালীন পালিকা মা চোখের আড়াল হতেই কেঁদে ভাসিয়ে দেয় শিশুটি। তার মন কী চাইছে, তা এত সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে চায়নি আদালত। বিচারপতি বলেন, মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ কমিটির কাছে শিশুটিকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে সোমবার একটি মামলা ওঠে। হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা ওই শিশু কার কাছে থাকবে তা নিয়ে সম্প্রতি মামলা দায়ের হয়। একদিকে ওই শিশুকে দাবি করেন তার জন্মদাতা বাবা। অন্যদিকে শিশুকে নিজের কাছেই রাখতে চান যিনি শিশুটিকে পালন করছেন, সেই পালিকা মা।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে ওই শিশুর জন্ম হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে শিশু কন্যার মা আত্মঘাতী হন। শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের অভিযোগে এই ঘটনা বলেও দাবি করেন মৃতের পরিবার। এদিকে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েটিকে তার বাবা ফেলে রেখে চলে যান বলেই অভিযোগ।
তখন ওই মেয়ে দুধের শিশু। নিজের বাবা ছেড়ে গেলেও, ফেলতে পারেননি পাড়ারই এক দম্পতি। ওই দম্পতি শিশুকন্যাকে যত্নে বড় করতে শুরু করেন। সম্প্রতি ওই শিশুর দিদিমা মারা গিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে মারা গিয়েছে তার পালক পিতাও।
জন্মদাতা বাবার এবার দাবি, ওই শিশুকে তিনি বড় করতে চান। মেয়েকে নিজের মতন করে গড়ে তুলতে চান। এদিকে শিশুর পালিকা মায়ের বক্তব্য, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ, শয্যাশায়ী ছিলেন। সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। পারিবারিক ব্যবসা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজেই দেখাশোনা করছেন তিনি। তাঁর নিজের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। যে মেয়েকে তিনি হাতে ধরে হাঁটা শিখিয়েছেন, কথা বলা শিখিয়েছেন, তাকে যত্নে বড় করতেও পারবেন তিনি। ওই শিশু তার নিজের মেয়ের মতন।
উল্টে পালিকা মায়ের প্রশ্ন, ছয় মাসের দুধের শিশুকে যে বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সে বাবা এখন কী করে এমন দাবি করছেন? যে কোনও শিশুর সমস্ত আশ্রয় তার মা। মা মারা যাওয়ার পর বাবার উচিৎ ছিল, ওইটুকু বাচ্চাকে আগলে রাখা। অথচ তিনি তা করেননি। এখন মেয়ে বড় হতেই এমন দাবি কি ন্যায়সঙ্গত?
এমত অবস্থায় গত সপ্তাহে বিচারপতি এক নির্দেশে জানিয়েছিলেন, শিশুর মনের হদিস করবে শিশু কল্যাণ কমিটি। তবে সোমবার শিশু কল্যাণ কমিটির কোনও প্রতিনিধি আদালতে হাজির ছিলেন না। গত সপ্তাহেও তারা ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। এদিন ওই শিশুকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এদিন ওই শিশুর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন বিচারপতি।
কিন্তু মায়ের হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার পর কান্না জুড়ে দেয় ওই শিশু। বিচারপতিরা কোনওভাবেই তার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। পরে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, হাওড়ার শিশু কল্যাণ কমিটি অফিসে ওই শিশুকে মঙ্গলবার নিয়ে যেতে হবে। সেখানে ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলবেন কমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার শিশু কল্যাণ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ফের মামলার শুনানি হবে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের কলকাতায় বৃষ্টির দাপট! এমন অকাল বর্ষণ গত ৪০ বছরে দেখেনি তিলোত্তমা