কলকাতা: একাধিক থানায় একের পর এক মামলা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী (Naushad Siddiqi)। তাঁর নির্দেশেই পুলিশকে মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) শুনানিতে তাই, নওশাদের বক্তব্যের ভিডিয়ো শুনলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। এদিন বিচারপতির একের পর এক প্রশ্নে কার্যত বিদ্ধ হল রাজ্য। নওশাদ বা অন্যান্য মামলাকারীদের ভূমিকা কীভাবে প্রমাণ হয়? সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
গত ২১ জানুয়ারি ভাঙড়ের অশান্তির জের পৌঁছয় ধর্মতলায়। আইএসএফের কর্মী-সমর্থকেরা পথ অবরোধ শুরু করলে তাঁদের সরাতে যায় পুলিশ। তখনই পুলিশের সঙ্গে নওশাদ শিবিরের কার্যত খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা ধর্মতলা চত্বর। সেদিনই গ্রেফতার করা হয় নওশাদ আরও ১৮ আইএসএফ কর্মী-সমর্থককে। পরে আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। হেয়ার স্ট্রিট সহ একাধিক থানায় মামলা হয় নওশাদের বিরুদ্ধে। বারবার পুলিশ হেফাজত বা জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিধায়ককে। পরে জামিনের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক।
মোট ৬৫ জন মামলাকারী আছেন। বিচারপতি এদিন রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, ‘ওই দিনের ঘটনায় প্রত্যেকের ভূমিকা প্রমাণ করতে পারবেন তো? সবাই গণ্ডগোলের সঙ্গে যুক্ত আছে জানলেন কী করে?’ বিচারপতি বলেন, ‘কোনও ব্যক্তি হয়ত পাশ থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, সেই সময় গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। তিনি হয়ত পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর এই গণ্ডগোলে কী ভূমিকা থাকতে পারে?’
একই সঙ্গে নওশাদের আইনজীবীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, যদি রাজ্য দেখায় যে নওশাদ সিদ্দিকীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, তাহলে? মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, এই ধরনের কোনও প্রমাণ পুলিশ দেখাতে পারবে না। এই প্রশাসনের ওপর কোনও ভরসা নেই বলে দাবি করে নওশাদের আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশকে মারতে বলা হয়েছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। এই ধরনের কোনও আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’
এদিন ল্যাপটপে নওশাদ সিদ্দিকীর পুরো ভাষণ শোনেন বিচারপতি বসাক। এরপর তিনি প্রশ্ন করেন, ‘পুলিশকে মারতে বলা হচ্ছে সেই প্রমাণ কোথায়?’ উত্তরে রাজ্য বলে, ‘সাক্ষীরা বলেছে।’ বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, কে সাক্ষী? একজন হকার? তিনি কী করে জানলেন? কোনও ভিডিয়ো এখনও অবধি নেই তো?
ভিডিয়ো ও সিসিটিভি ফুটেজ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য। একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। রাজ্যের দাবি, সাক্ষীরাই বলেছে, নওশাদ পুলিশকে আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।