Tumor Surgery: চার বছর ধরে ঠোঁটের উপর টিউমার, সাত ঘণ্টার অপারেশনে মুখে হাসি ছোট্ট ঈশিকার

Tumor Surgery: গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে অপারেশন হয় ঈশিকার। শিশুকন্যার বাঁ হাত থেকে শিরা, ধমনী-সহ কৃত্রিম ঠোঁট নির্মাণে প্রয়োজন অন্যান্য অংশ নিয়ে চলে সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার।

Tumor Surgery: চার বছর ধরে ঠোঁটের উপর টিউমার, সাত ঘণ্টার অপারেশনে মুখে হাসি ছোট্ট ঈশিকার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2022 | 10:48 PM

কলকাতা: ঠোঁটের উপরের অংশে গজিয়ে উঠেছিল টিউমার। টিউমারের জেরে নাকের ডানদিক বুজে গিয়েছিল। শ্বাস নিতে পারছিল না বাগদার বাসিন্দা ঈশিকা দত্ত। এমনকী ঠোঁট নাড়তে না পারায় কথাও বলতে পারছিল না সে। এদিকে অপারেশন করলে আবার কথা বলার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অন্যদিকে তার বাবাও আবার মানসিকভাবে অসুস্থ। জটিলে অসুখে আক্রান্ত কন্যা সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিল মা। একরত্তির ভবিষ্যতের চিন্তায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা ঠাকুমা আন্না দত্তের। ছোট্ট নাতনির চিকিৎসা কীভাবে হবে তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। আর ঠিক তখনই সাহায্যের হাত বাড়িতে দেন প্রতিবেশীরা।   

প্রতিবেশীদের তৎপরতাতেই জটিল রোগে আক্রান্ত নাতনিকে নিয়ে আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বহির্বিভাগে আসেন। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন বছর পাঁচ ধরে টিউমার ঈশিকার ঠোঁটের উপরের অংশে বাসা বাঁধলেও অবহেলায় তা বৃহদাকার ধারণ করে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শিশুকন্যাকে নিয়ে ওর ঠাকুমা যখন বহির্বিভাগে আসেন তখন ওর ঠোঁটের উপরের অংশ বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায়ই ছিল না। কিন্তু তাতে শিশুকন্যার কথা বলার শক্তি হ্রাস পেত। আর সে কারণেই উপায় কৃত্রিম উপায়ে ঠোঁট প্রতিস্থাপন। সেই চিকিৎসা পদ্ধতিও সহজ নয়। 

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বড়দের মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি করার ক্ষেত্রেই নানারকম জটিলতা তৈরি হয়। আর এ ক্ষেত্রে ঈশিকা তো পাঁচ বছরের শিশুকন্যা! তবে শেষ পর্যন্ত কঠিন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন আর জি করের মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জন গৌরব রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বে অ্যানাস্থেসিস্ট, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত হয় আট সদস্যের চিকিৎসক দল। গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে অপারেশন হয় ঈশিকার। শিশুকন্যার বাঁ হাত থেকে শিরা, ধমনী-সহ কৃত্রিম ঠোঁট নির্মাণে প্রয়োজন অন্যান্য অংশ নিয়ে চলে সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সফলও হয়। 

জটিল অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জন গৌরবরঞ্জন চৌধুরী বলেন, “পাঁচ বছরের বাচ্চা। কিন্তু গত চার বছর ধরে টিউমারটা ছিল। কিন্তু, এই সময় কোনও চিকিৎসা হয়নি। আমাদের কাছে যখন এসেছিল তখন টিউমারটার সাইজ ছিল ৬ সেন্টিমিটারেরও বেশি। ওই টিউমার থেকেই মাঝেমধ্যে রক্তও বের হত। যার কারণে ওর উপরের ঠোঁট পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছিল। আমাদের দেখেই মনে হয়েছিল দ্রুত অপারেশন করতে হবে। সেই মতো রুটিন প্রোটোকল মেনে আমরা অপারেশন করি।” 

প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, “ও একেবারেই প্রান্তিক রোগী। ওকে দেখার কেউ ছিল না। সে কারণে ওর রোগটি দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসাই হয়নি। ফলে একটা সময় পর খেতে, কথা বলতে নিশ্বাস নিতেও বেকায়দায় পড়ছিল ও। মাইক্রোভাসকুলার সার্জারি এমনিতেই খুব জটিল অপারেশনয। তবে এ ক্ষেত্রে বাচ্চাটির বয়স শুরুতেই আমাদের ভাবাচ্ছিল।”  ঈশিকার ঠাকুমা আন্না দত্ত বলেন, “ওর যখন ২ বছর বয়স তখন ওর মা ওকে ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকেই আমার কাছে মানুষ। ওর এই রোগ নিয়ে একবার বনগাঁর হাসপাতালেও দেখাই। ওখন থেকে এখানে পাঠায়। এখন আর জি করে এসে অপারেশন হল। এখন ভাল আছে ও।”