কলকাতা : কলকাতা হাইকোর্টে বেনজির বিশৃঙ্খলার ছবি। কেন একের পর এক মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের একাংশ। মঙ্গলবারই আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হাতাহাতির ছবি দেখা যায় আদালত চত্বরে। আর বুধবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালত কক্ষে প্রবেশ করতেই যে ছবি দেখা গেল, তা কার্যত নজিরবিহীন। বিক্ষোভের জেরে ধাক্কা মেরে বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আদালতে অসুস্থ বোধ করেন তিনি। তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ দিন তাই কোনও আইনজীবীকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
এজলাস বয়কট করার দাবি আগেই জানিয়েছেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। অভিযোগ, বুধবার সকাল থেকেই দেখা যায় এজলাসে কোনও আইনজীবীকেই প্রবেশ করতে দেননি তাঁরা। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ধাক্কা মেরে বসিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, আদালত বয়কট করা যায় না। বিজেপিপন্থী আইনজীবী অথবা যে সব আইনজীবীরা এজলাস বয়কট করার পক্ষে নয়, তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এরপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রবেশ করলে সেই বিক্ষোভ আরও বড় আকার নেয়। ঘটনার পর প্রধান বিচারপতির চেম্বারে যান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
এজলাসের মেঝেতে বসে যখন আইনজীবীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন, তখন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের প্রশ্ন করেন, ‘আমার এজলাসে কি কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে?’ জবাবে আইনজীবীরা জানান, সর্বসম্মতভাবে এজলাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার অ্যাসোসিয়েশন। আর তা শুনেই প্রতিবাদ জানান অন্যান্য আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, এটা মোটেই বার অ্যাসোসিয়েশনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। তাঁদের দাবি, যাঁরা বিরোধিতা করছেন না, তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হোক।
বিচারপতি তৃণমূলপন্থী আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে-কে বলেন, ‘আপনাদের বলছি, রাজনীতি করবেন না, আমি তো রাজনীতি করছি না। একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে চেয়েছি।’ তৃণমূলের আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে বলেন, ‘আপনার সিবিআই নির্দেশ নিয়ে কিছু বলিনি। শুধু ডিভিশন বেঞ্চের ওপরে কেন, সেটাই বলেছি।’ এই জবাব শুনে বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন আমি ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যান। এ ভাবে বিক্ষোভ কেন?’
কেন বয়কট করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে এ দিন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের পক্ষে ইমতিয়াজ আহমেদ যুক্তি দেন। আর পাল্টা যুক্তি দেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। আইনজীবী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ঘটনা নজিরবিহীন। আইনজীবীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাইকোর্টের ইতিহাসে কখনও এরকম ঘটনা দেখা যায়নি। আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ আদালতে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ দিন আদালত চত্বরের পরিস্থিতিক একটি ভিডিয়ো টুইট করেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।
TMC is not allowing the lawyers to enter into Court no.17 (Court of Hon’ble Justice Abhijit Gangopadhyay).
They have blocked the door of the court.
As per them Justice Gangopadhyay has comitted a crime by passing orders in SSC corruption cases.CC: @jdhankhar1 , @KirenRijiju pic.twitter.com/X2sGUfoBj5
— Tarunjyoti Tewari (@tjt4002) April 13, 2022
কেন বারবার সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর তাতে বিচার বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। সেই অভিযোগে মঙ্গলবারই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত চত্বর। মঙ্গলবার বার অ্যাসোসিয়েশন একটি বৈঠকে বসেছিল, সেখানে মাইকের তাঁর ছিঁড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে বিজেপি ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত। সেই রেশ ধরে বুধবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। পরে