কলকাতা : প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) সংক্রান্ত মামলায় নজিরবিহীন পদক্ষেপ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly)। চাকরির জন্য যাঁদের কাছে ইন্টারভিউ দিতে হয়, সেই পরীক্ষকদের আদালতে ডেকে একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন বিচারপতি নিজে। বন্ধ ঘরে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এমন ৩০ জন পরীক্ষককে। কলকাতা হাইকোর্টের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকেই। আইনি ও সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিচারপতি এই কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। মূলত অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার ভিত্তিতেই এই মামলা হয়।
২০১৪ সালের প্রাথমিকের প্রার্থীদের ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদেরই এদিন তলব করা হয়েছিল। একদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল ৩০ জনকে। আজকের এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে উপস্থিত ছিলেন না হাওড়ার পরীক্ষকরা। মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।
এই ৩০ জনকে এদিন প্রথমে বসানো হয় হাইকোর্টের সার্ধ-শতবার্ষিকী ভবনের ন’তলার অডিটোরিয়ামে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তলের রেজিস্ট্রার লাউঞ্জে। জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর ১০ মিনিট আগে ন’তলার অডিটোরিয়ামে যান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে বিচারপতি পরীক্ষকদের বলেন, ‘ভয়ের কোনও কারণ নেই, ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হবে, যে যা জানেন সত্য বলবেন, তারপর বেরিয়ে যাবেন।’
এরপর অডিটোরিয়াম ছেড়ে সিড়ি দিয়ে আটতলায় নেমে রেজিস্ট্রার লাউঞ্জে প্রবেশ করেন বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক তালিকা মিলিয়ে একজন একজন করে পরীক্ষককে ডেকে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে একে একে নীচে নেমে যান ও আদালত ছাড়েন তাঁরা।
মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় সেখানে অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপ্টিটিউট টেস্টই নেওয়া হয়নি। পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে নম্বর বিতরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তার ভিত্তিতেই এদিনের এই জিজ্ঞাসাবাদ।
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, ‘বিচারপতি আর্টিকল ২২৬ এর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেই পারেন। আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য় গ্রহণের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন তিনি। সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই কাজ করতে পারেন।’ আর এই মামলার ক্ষেত্রে বিচারপতির এই পদক্ষেপের কারণে সত্য উদঘাটন সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি।