কলকাতা : কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, পুর নির্বাচন প্রসঙ্গে ‘ব্যক্তিগত মত’ও পোষণ করেছেন তিনি। আর সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। অভিষেক যখন নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, তখন দলের অন্দরেই বাড়ল বিরোধিতা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী অবস্থানেই অনড় রইলেন দলীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে দল থেকে তাড়িয়ে দিক! এমন কথাও শোনা গেল শ্রীরামপুরের সাংসদের গলায়। অভিষেককে নেতা হিসেবে মানতে রাজি নন, সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি।
কেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নিজস্ব মত থাকবে, যার সঙ্গে দলের মিল নেই! সেই প্রশ্নই তুলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদটি সর্বক্ষণের। তাই এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত কোনও মত থাকতে পারে না।’ এই ইস্যুতে যখন অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হতে শুরু করেছে, তখন নিজের অবস্থানেই অনড় রইলেন কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়।
TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার বিরোধী কথা বলেছেন অভিষেক। এটাই আমার মত। সরকার যখন একটা স্ট্যান্ড নিচ্ছেন, তখন অন্য মত প্রকাশ করার অর্থ দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। নির্বাচন হওয়া ভালো কি মন্দ, আমি তাতেও যাব না।’ নিজের বক্তব্যে অনড় থেকে তিনি বলেন, ‘দল থেকে তাড়িয়ে দিক না, তাড়িয়ে দিলে আট লক্ষ টাকা রোজগার করব।’ বর্ষীয়ান রাজনীতিক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘২০১১ সালের আগে থেকে রাজনীতিতে আছি। আমি পিতৃ পরিচয়ে রাজনীতি করতে আসিনি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে নেতা মানতে রাজি নন কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। তাঁর দাবি অন্য়ান্যরা ‘পদাধিকারী’। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভিষেকের নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়নি। অভিষেক একজন পদাধিকারী। নেতা মমতাই। ত্রিপুরা, গোয়া জিতিয়ে দাও, মুখ্যমন্ত্রী করে দাও, তবে অভিষেককে নেতা বলে মেনে নেব।’ অভিষেকের কথা আর বিজেপির কথা এক সুরে হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন সাংসদ।
বুধবার শুধুমাত্র ডায়মন্ড হারবারের ৫৩ হাজার কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। তৃণমূল এই বিষয়টাকে ‘বিশ্বরেকর্ড’ বলে উল্লেখ করেছে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য়। এই প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, ‘আমাকে কিট দিলে আমিও দেখিয়ে দেব। আমাকে অত কিট দিক না, ৫০ হাজার দিক। আমিও করে দেব ১২ ঘণ্টায়।’ তাঁর প্রশ্ন ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল আবার কী?’
কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক সামনে আসার পর তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ‘সব বিষয়ের’ ওপর নজর রাখছে। তাঁর দাবি, বিতর্ক সরিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, অভিষেক যা বলেছেন, তা মানুষের মনের কথাই বলেছেন। কুণাল বলেন, ‘এ নিয়ে কোনও প্রকাশ্য বিতর্ক পার্টি ভালচোখে দেখছে না। অনাবশ্যক জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে।’
কুণালের এমন মন্তব্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কুণাল ঘোষের সার্টিফিকেট নিয়ে আমাকে চলতে হবে না। কুণাল মমতাকে নিয়ে কি কদর্য কথা বলেছেন! দলের মুখপাত্র হয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমার চরিত্র হনন করেছেন কুণাল, আমি এটা দেখে নেব।’ সাংসদের কথায়, ‘আমাকে কখনও জেলে বসে সাংবাদিক বৈঠক করতে হয়নি।’