Kalyan Banerjee on Abhishek Banerjee: ‘মমতার সরকারের বিরুদ্ধাচারণ’, অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মতকে’ কল্যাণের নজিরবিহীন ভর্ৎসনা!

TMC: "পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত কোনও মত থাকতে পারে না। অনেক বিষয়ে আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই তা প্রকাশ্যে বলা যায় না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধাচারণ। এভাবে রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে''।

Kalyan Banerjee on Abhishek Banerjee: 'মমতার সরকারের বিরুদ্ধাচারণ', অভিষেকের 'ব্যক্তিগত মতকে' কল্যাণের নজিরবিহীন ভর্ৎসনা!
তৃণমূল নেতৃত্বের মন্তব্যে শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। অলংকরণ: অভীক দেবনাথ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 13, 2022 | 5:05 PM

কলকাতা: ডায়মন্ড হারবারে একদিনে ৫০ হাজার কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। পুরভোট আবহে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের করোনা পরিস্থিতিতে এমনই এক টুইট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি দাবি করেছেন রাজ্যের সমস্ত সংসদীয় এলাকার চেয়ে তাঁর এলাকায় কোভিড পজিটিভিটি হার সবচেয়ে কম। আর এদিনই নিজের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে খোঁচা দিলেন আইনজীবী- সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। যা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দুই গোষ্ঠী তৈরির সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল। স্পষ্ট হচ্ছে সঙ্ঘাত। কিন্তু কেন?

দু’ মাস সব বন্ধ রাখা হোক, আমার ব্যক্তগত মত: অভিষেক

সম্প্রতি ডায়মন্ডহারবারে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সেখানকার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বৈঠকের পর কোভিড পরিস্থিতিতে পুরভোট কতটা যুক্তিযুক্ত, এই প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেছিলেন, “এখন মেলা, খেলা, ভোট সব বন্ধ রাখা উচিত। দু’‌মাস সব বন্ধ রাখা উচিত। মানুষ বাঁচলে আমরা বাঁচব”। পুরভোট নিয়ে কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে দেওয়া দলের সাংসদ অবশ্য তার পর যোগ করেন, “এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মত”।

অভিষেকের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয় বিজেপি। দিলীপ ঘোষরা কটাক্ষ করেন, অভিষেকবাবু এক কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কথা। তাঁদের দলই তো সরকার চালাচ্ছে। আবার করোনা পরিস্থিতিতে পুরভোটের পক্ষেও সওয়াল করছেন। সেখানে ব্যক্তিগত মত ব্যক্ত করে কী হবে! এবার অভিষেকের এই ‘ব্যক্তিগত মত’-কেই খোঁচা দিয়ে বসলেন তাঁর দলের বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে তীব্র হল রাজনৈতিক চাপানউতোর।

কী বলেছেন কল্যাণ?

অভিষেকের বক্তব্য প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের সাংসদের মন্তব্য, “দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদটি সর্বক্ষণের। তাই এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত কোনও মত থাকতে পারে না। অনেক বিষয়ে আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই তা প্রকাশ্যে বলা যায় না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধাচারণ। এভাবে রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে”।

এখানেই থামেননি তিনি। বিরোধীদের মতোই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন বর্ষবরণের দিনে ডায়মন্ড হারবারে ফুটবল প্রতিযোগিতা নিয়ে। তাঁর কথায়, “ওই ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন যেখানে হয়েছিল সেখানে কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। মুম্বইয়ের গায়ককে এনে জলসা হয়েছিল। সেখানে কি সংক্রমণের সম্ভাবনা ছিল না?” অর্থাৎ, বরাবর ঠোঁটকাটা বলে পরিচিত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুর চড়ালেন অভিষেকের দিকে। তেমনি তিনি এটাও জানালেন, রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।

কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে কী বলছে তৃণমূল?

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য় নিয়ে এদিন দলের রাজ্য় সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “অভিষেকের এমপি কাপ যখন হয়েছিল, তখন সংক্রমণ এত ছিল না। অভিষেক নিজেও যাননি, যাতে ভিড় না হয়”। তার পর তিনি যোগ করেন, “কোন সাংসদ কী বলেছেন, কোন সময় বলছেন, সেটা দেখা দরকার। কেউ বললেই কিছু বলে ফেলা উচিত না।” তবে তার পর তিনি এও জানিয়ে রাখেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শৃঙ্খলা কমিটি পক্ষে ‘সব বিষয়ের’ ওপর নজর রাখছেন।

তার পর কুণাল এও যোগ করেন, “বিতর্ক সরিয়ে যদি দেখেন, অভিষেক যা বলেছেন, তা মানুষের মনের কথাই বলেছেন। এ নিয়ে কোনও প্রকাশ্য বিতর্ক পার্টি ভালচোখে দেখছে না।” তিনি এও বলেন অভিষেক সাংসদ হিসাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন। বাকিরাও নানা ভাবে চেষ্ঠা করছে। এই মডেল বনাম ওই ওই মডেল এই ব্যাখ্যাতেই যত সমস্যা হচ্ছে। অভিষেক -এর ব্যক্তিগত মতেরও একটা গুরুত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আবার দলের আরেক সাংসদ সৌগত রায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “অভিষেক মডেল নিয়ে এসব অনাবশ্যক জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে । যে কোনও সংসদ তার এলাকায় করতেই পারেন।”

অর্থাৎ, তৃণমূলের একপক্ষ অভিষেককে সমর্থন করছেন, আরেক পক্ষ তাঁর বক্তব্যের প্রকাশ্যেই সমালোচনা করছেন। স্পষ্টতই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। এতে তৃণমূলের মধ্যে চোরা ভাঙনও দেখছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

আরও পড়ুন: Municipality Election Calcutta High Court: বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? একে অন্যের কোর্টে বল ঠেলল কমিশন-রাজ্য! স্থগিত ‘পুর’ রায়দান