Kanhaiya VS Srijan: বিজেপি বিরোধিতায় ‘সমর্থন’, নীতির প্রশ্নে ‘সংঘাত’
Saikat Giri, AISF: 'আগামীতে আমার দল আরও আরও কানহাইয়ার জন্ম দেবে', প্রত্যয়ী এআইএসএফ নেতা সৈকত গিরি।
কলকাতা: মেধাবী। প্রতিভাবান। যুক্তিবাদী। সুবক্তা। মেঠো ভাষায় চাঁছাছোলা আক্রমণে সিদ্ধহস্ত। ক্ষমতা আছে স্লোগানে তুফান তোলার। ঝুলিতে রয়েছে ১৮ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। তার উপর জেএনইউ ফেরত ছাত্রনেতা। সম্ভাবনার শংসাপত্রে কানহাইয়া কুমার একশোয় একশো। তাঁকে কংগ্রেস নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন ছিল, কানহাইয়া কি কংগ্রেসে যাবেন? কথায় না বড় হয়ে কাজে করে দেখিয়েছেন কানহাইয়া। গান্ধী জয়ন্তী পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি, ভগৎ সিংয়ের জন্মজয়ন্তীতেই ভারতীয় রাজনীতির সুপ্রাচীন বটবৃক্ষের ছায়ায় এসেছেন। তেরঙ্গা উত্তরীয় গলায় নিয়ে ‘শপথ’ নিয়েছেন, “দেশ বাঁচাবেন।”
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মানবেন্দ্র নাথ রায়ের পার্টি আর করবেন না কানহাইয়া। পাল্টেছেন নিজের ‘বিপ্লবী’ পরিচিতিও। কানহাইয়া এখন থেকে ‘রাহুলপন্থী’ গান্ধীবাদী।
রাজনৈতিক মহলে চর্চা, বিহারে নাকি বড় দায়িত্ব পেতে পারেন কানহাইয়া। শুধু তাই নয়, উত্তর প্রদেশ ভোটের আগে গোবলয়ে তাঁকে সামনে রেখেও ঘুঁটি সাজাতে পারে কংগ্রেস। এখন প্রশ্ন, কানহাইয়া হাত তো ধরলেন, ব্যারিকেড গড়তে পারবেন কি?
উত্তর, না কানহাইয়ার এই পথ একাবারেই সুগম নয়। নতুন বন্ধু করতে গিয়ে পুরনো বন্ধুত্ব হারানোর শঙ্কাই বেশি! সমঝোতা হলেও বাড়বে সংঘাত! কংগ্রেসে যোগদান প্রসঙ্গে কানহাইয়ার সোজা উত্তর ছিল, “বড় জাহাজ ডুবলে ছোট ছোট নৌকাও ডুববে। কংগ্রেস বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।” সংঘাত এখানেই। দেশ বাঁচানোর দায় আছে। ঠিক। কিন্তু কংগ্রেস বাঁচানোরা দায় বামেদের কোনও দিনই ছিল না, আর এখনও নেই।
বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেস ও কানহাইয়াকে ‘সমর্থন’, তবে নীতির প্রশ্নে ‘সংঘাত’ থাকবেই, সাফ কথা সৃজন ভট্টাচার্যের। দূরবর্তী সহকর্মীর দলবদল নিয়ে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, “বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে সংশয়, সঙ্কোচহীন সমর্থন থাকবে। তবে বিকল্প নীতির প্রশ্নে সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” আরও একধাপ এগিয়ে সৃজনের বক্তব্য, “কানহাইয়া এতদিন বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মনে প্রাণে বামপন্থী ছিলেন না। আদর্শগত দিক থেকে অবস্থান ভীষণই নড়বড়ে। শুধু গান্ধীজি আর আম্বেদকরের ছবি হাতে নিয়ে দেশ বাঁচানো যায় না।”
একই মত ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধরেরও। দীপ্সিতার কথায়, “দেশ বাঁচাতে দলবদলের প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।” কানহাইয়ার কংগ্রেসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দীপ্সিতার চোখে ‘অপ্রত্যাশিত’। ‘বন্ধু’ কানহাইয়াকে ‘বন্ধু’ দীপ্সিতার পরামর্শ, “বন্ধুর চেয়ে পার্টিই বড়।”
আগামী দিনে কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম জোট হলে কী অবস্থান নেবে বাংলার দুই বামছাত্র নেতৃত্ব? সৃজন এবং দীপ্সিতা দুজনেই পরিস্থিতি ও সম্ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। পার্টি বললে কংগ্রেসের কানাহাইয়ার সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়াতে কুণ্ঠা করবেন না তাঁরা। তবে হ্যাঁ, নীতির প্রশ্নে আপোসহীন লড়াইয়েই থাকবেন দীপ্সিতা, সৃজন।
কানহাইয়া কংগ্রেস চলে যাওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে ‘দুঃখ’ পেয়েছেন এআইএসএফ নেতা সৈকত গিরিও। সতীর্থর দলবদল নিয়ে সৈকতের প্রতিক্রিয়া, “দুর্ভাগ্যজনক। সারা দেশে বাম ছাত্র আন্দোলনের মুখ পুড়ল। আমরা শূন্য হয়েছি ঠিকই কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনও আপোস করিনি। আমি মনে করি না স্রেফ দলবদল করে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনা যায়।”
কানহাইয়া কী কারণে কংগ্রেসে গেলেন? কী মনে হয়? সৈকতের জবাব, “সংসদীয় রাজনীতির অঙ্ক কষে কংগ্রেসকে শক্তিশালী মনে করেছে কানহাইয়া। কিন্তু বামেরা কখনও শুধুমাত্র সংসদীয় রাজনীতির কথা ভাবে না। আমাদের লড়াই নীতির প্রশ্নে। কানহাইয়াকে সিপিআই অনেক কিছু দিয়েছিল। এত কম বয়সে ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ মেম্বার। লোকসভায় প্রার্থী করা হয়েছে। এই প্রজন্মের একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ওর হয়ত আরও প্রত্যাশা ছিল।” এই ক্ষতি পূরণ করতে পারবে সিপিআই? প্রত্যয়ী ছাত্রনেতার জবাব, “আগামীতে আমার দল আরও আরও কানহাইয়ার জন্ম দেবে।”
আরও পড়ুন: ‘কানহাইয়া পারলেন না’, একদা সতীর্থ ‘হাত’ ধরায় খেদ দীপ্সিতার