কলকাতা: এক বিজেপি যুব নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল চিৎপুরে। মৃতের নাম অর্জুন চৌরাসিয়া। রেল কোয়ার্টার থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কলকাতা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুব মোর্চার সহ সভাপতি ছিলেন অর্জুন চৌরাসিয়া। ঘটনায় রাজনৈতিক শোরগোল পড়েছে। বিজেপির তরফ থেকে খুনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পরিবারও তুলছে একই অভিযোগ। এদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে এলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। আজই, কলকাতায় পা রাখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অর্জুনের নেতৃত্বেই কাশীপুর থেকে বাইক মিছিল করার কথা ছিল যুব মোর্চার। বিজেপি কর্মীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন অমিত শাহ। তিনি আজই অর্জুনের বাড়িতে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। সঙ্গে থাকবেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, অমিত মালব্যরা। তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, রেল কোয়ার্টারের পাশেই অর্জুনের বাড়ি। পরিবার বলছে, কাজে যাচ্ছেন বলে বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন অর্জুন। রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরিবারের তরফ থেকে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ করা হয়। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। শুক্রবার সকালে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার কথা ভেবেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পান রেল কোয়ার্টারের নীচে এক ঘরে অর্জুন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় চিৎপুর থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের সাইন্টিফিক উইং।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে। তিনি বলেন, “খবরটা শুনে আমরা চলে এসেছিলাম এলাকায়। পুলিশ প্রথমে মিডিয়াকে অনুমতি দিচ্ছিল না। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন কলকাতায়। বুথ স্তরের যে সব কর্মীরা দিবারাত খাঁটেন, তাঁদের পরিণতিটা আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখবেন। আমরা তাঁর সামনে তুলে ধরব। অর্জুনের আজকে বাইক র্যালি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত করতে যাওয়ার কথা ছিল। কাশীপুর থেকে যেতাম আমরা। সাধারণ কর্মীদের প্রাণের কী অবস্থা! এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যদি বিজেপির হয়ে ঝান্ডা ধর, তাহলে এই পরিণতি হবে। অর্জুনের কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই।”
বিজেপি নেতাই জানাচ্ছে, ভোট পরবর্তী সময়ে অর্জুন বেশ কিছু দিন ধরে বাড়িছাড়া ছিলেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশ বের হওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। এলাকায় মণ্ডল সভাপতি ছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁরই নেতৃত্বে বাইক র্যালি হওয়ার কথা ছিল কাশীপুর থেকে। এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আসলে এলাকাকে বিরোধী শূন্য করতে চাইছে। এ প্রসঙ্গে কল্যাণ চৌবে বলেন, “তৃণমূল চাইছে এলাকায় বিরোধীরা থাকবেন না। একা অর্জুনকে খুন নয়, আসলে ওকে মেরে এই বার্তাই দিতে চাইছে তৃণমূল। বিরোধীশূন্য রাজনীতি করতে চাইছে তৃণমূল।” ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কানে বিষয়টি গিয়েছে। তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
তদন্তকারীরা একটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন। অর্জুনের পায়ে একেবারে পালিশ করা বুট জুতো ছিল, জামা ইন করে পরা। দৃশ্যত তাঁকে সে অর্থে বিধ্বস্ত লাগছে না। তবে তার পা মাটির সঙ্গেই লেগে ছিল। সেখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি নেতৃত্ব।