কলকাতা: দুর্গাপুজোয় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানলে হতে পারে সুপার স্প্রেডার। সতর্ক করছে আইসিএমআর।
দেশের ৩ মেট্রো সিটিতে বাড়ছে R-VALUE। কী এই আর-ভ্যালু? আর-ভ্যালু ১-এর উপরে থাকার মানে হল, করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির থেকে একাধিক মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। অর্থাত্ দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ভাইরাস। গত সপ্তাহে দেশে আর-ভ্যালু ০.৯৩ থেকে ০.৯১-এ নেমে গিয়েছিল। কিন্তু উত্সব আবহে আর-ভ্যালু ফের ১ ছাপিয়েছে। দুর্গাপুজোর দোরগোরায় কলকাতার আর ভ্যালু ১ থেকে বেড়ে ১.০৬ -এ দাঁড়িয়েছে। পুজোর শুরুতেই এই অবস্থা হলে, পুজোর পর কী হবে? ভেবে আঁতকে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা ভয় পাচ্ছেন, পুজোতে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় বাড়তে পারে। নিয়ম না মানলে ভয় বাড়াতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা। ফের হু হু করে বাড়তে পারে সংক্রমণ। শুধু তাই নয়, পুজোতে ইতিমধ্যেই অনেকে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন। সেক্ষেত্রে পর্যটনকেন্দ্রগুলিতেও ভিড় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাতেই চিন্তিত চিকিত্সকরা। কারণ নতুন সার্ভে রিপোর্ট বলছে, যে চার জেলায় করোনা সংক্রমণের দৈনিক হার বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিঙ ও কালিম্পঙ।
স্বাস্থ্য দফতরের শেষ প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৭৮৬ জন। ইতিমধ্যেই পুজোর গাইডলাইন প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি হাইকোর্টের তরফেও জারি করা হয়েছে নতুন নির্দেশিকা।
সিঁদুর-খেলা থেকে আরতি- সব উপাচারেই অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে সব ক্ষেত্রেই একটি শর্ত। টিকার ডবল ডোজ় নেওয়া থাকলেই মণ্ডপে অনুমতি মিলবে অঞ্জলি দেওয়ার কিংবা দশমীতে সিঁদুর খেলার। দুর্গাপুজোর উপাচার মানার ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের ডবল ডোজ় বাধ্যতামূলক করেছে হাইকোর্টের বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় ও অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
পুজো মণ্ডলগুলিতে এক সঙ্গে কত জন করে থাকতে পারবেন, সেই সংখ্যাটাও আদালত নির্দিষ্ট করে দেয়। হাইকোর্টের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, বড় মণ্ডলগুলিতে একসঙ্গে থাকতে পারবেন ৪৫-৬০ জন দর্শনার্থী। ছোটো মণ্ডপগুলিতে একসঙ্গে থাকবে পারবেন ১৫ জন। নিয়ম না মানলে পুজোর অনুমতিই বাতিল করে দেওয়া হবে বলে কঠোরভাবে জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
পুজো মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’র বিষয়ে আরও একবার সতর্ক করল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন, পুজোর গাইডলাইন মামলায় এজিকে তলব করে আদালত। এজি-র সামনেই আদালত আরও একবার পুজোতে স্বাস্থ্য বিধি মানার ব্যাপারে কড়া বার্তা দেয়। পুজো মণ্ডপগুলি যাতে দর্শনার্থী শূন্য হয়, সে ব্যাপারে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যকে।
রাজ্য সরকারের গাইডলাইন বিষয়ে এজি আদালতকে স্পষ্ট করেন
১) সরকার সার্কুলার জারি করেছে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না।
২) ১৫ জনের বেশি প্যান্ডালে নয়। কোনও বাধা না দেওয়া হলেও ‘নো এন্ট্রি জোন’ রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে হবে।
৩) এজি এদিন আদালতে স্পষ্ট করেন, গত বছরও সিঁদুর খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। তবে কতজন এক সঙ্গে মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন, তার সংখ্যা দেওয়া হয়েছে।
৪) ঢাকি শুধু প্যান্ডালেই থাকবেন।
আইসিএমআর-এর রিপোর্ট প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী সত্যেষ্বানন্দ বলেন, “দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এটি হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। তবে কোভিডকে রুখতে আমাদেরই সচেতন হতে হবে।”
বিশিষ্ট চিকিত্সক বলছেন, “মানুষকেই সচেতন হতে হবে। না হলে দুর্গাপুজোয় সংক্রমণ হু হু করে বাড়বে। এতে বিপদ আরও বাড়বে। আবেগে স্বাস্থ্যবিধি ভুললে চলবে না।”
আরও পড়ুন: Durgapuja Guidelines: সিঁদুরখেলা থেকে অঞ্জলি সবই করা যাবে কিন্তু…, হাইকোর্টের নয়া নির্দেশিকা