কলকাতা: এ এক অন্য দৃশ্য। যা এ যাবৎ ব্রিগেডের ইতিহাসে দেখা যায়নি। রবিবাসরীয় ব্রিগেড তখন উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। এবারের ভিড়ে রক্ষণশীলতার বেড়ি ছিল না, পক্ককেশীদের গুরুগম্ভীর ভাষণও ছিল না। মূল আকর্ষণ ছিল জেন ওয়াই। ফ্ল্যাশ মব থেকে শুরু করে দেওয়ালে দেওয়ালে স্প্রে প্রিন্ট- হিট প্যারোডি, টু্ম্পা সোনা গান-সবই ছিল এবারের ব্রিগেড সংস্কৃতিতে। বামেদের ব্রিগেডে এ সবই এখন অভিযোজিত অধ্যায়। নজর কিন্তু কাড়ল প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রী। ব্রিগেড সমাবেশে (Left Congress Brigade 2021) আসা কনিষ্ঠতম সদস্য বোধহয় সে-ই।
মানিকতলার বাসিন্দা প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রীর গায়েও লাল টিশার্ট। চোখে চশমা। মাথায় লাল টুপি। নিষ্পাপ চেহারায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ। ছিপছিপে চেহারা সেই বাচ্চা মেয়েটার গলায় ‘আমাদের ভয় কাহারে….’। ব্রিগেডে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাকিদের সঙ্গে সুর মেলাতে দেখা গেল তাকেও। ব্রিগেডের সমাবেশে এত ছোট সদস্যকে গান গাইতে শেষ কবে দেখা গিয়েছিল, তা স্মৃতি হাতড়েও মনে করতে পারছে না বাম নেতৃত্ব।
মানিকতলার বাসিন্দা রাইম প্রধানের বয়স বড়জোর ছ’বছর। সকালে ‘মামমাম’এর হাত ধরে প্যারেড গ্রাউন্ডে চলে এসেছে সেও। ‘কত্ত মানুষ!’ এত লোক তো একসঙ্গে আগে দেখেনি রাইম। সেই রাইম এত লোকের মাঝেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুর মেলাল। গাইল, ‘আমাদের ভয় কাহারে…’ রবি ঠাকুরের সেই গানের পরের লাইন, ‘বুড়ো বুড়ো চোর ডাকাতে কী আমাদের করতে পারে…’
রাইমের সঙ্গে থাকা বাকি ‘আঙ্কেল’ কিংবা ‘আন্টি’দের এই গানের অর্থ খুবই পরিষ্কার। কেন ব্রিগেডের মঞ্চে গাওয়ার জন্য এই গানকেই বাছা হল? কাদেরই বা বিঁধতে চেয়েছেন তাঁরা- তা অত্যন্ত জটিল পাটিগণিতের অঙ্ক। এ সব বোঝে না শিশু মন। রাইমও বোঝেনি বোধহয়। তবে মামমামের থেকে রাইম বুঝেছে এই গান ‘নির্ভয়ের গান’… রাইম তার ‘মামমাম’এর হাত ধরে ব্রিগেডের সভা উপভোগ করেছে চেটেপুটে, ছুটেছে, দৌড়ে বেড়িয়েছে, নিজের মতো করে উপভোগ করেছে রবিবাসরীয় ছুটি। তবে বোঝেইনি কখন সে চলে এসেছে লাইমলাইটে। এত লোকের ভিড়ে ফুটিয়ে তুলেছে বার্তা।
আরও পড়ুন: ‘আমারই নাম কিন্তু টুম্পা’, প্যারোডির আক্ষরিক অর্থ বোঝাতে কার হাত ধরে ব্রিগেডে শ্রীলেখা?
এবারের ব্রিগেড নিঃসন্দেহে তৈরি করেছে অন্য সংস্কৃতি। তবে তাতে ছাপ ফেলল রাইম আর রাইমের সমবয়সী আরও বেশ কয়েকজন সঙ্গী যারা বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছিল প্যারেড গ্রাউন্ডের ময়দানে।