কলকাতা: শহরের ফুটপাত। এটাই কি এখন সবথেকে চিন্তার বিষয় কলকাতা পুরনিগমের (Kolkata Municipality) সড়ক বিভাগের বিশেষজ্ঞদের কাছে? কারণ শহরের একের পর এক ফুটপাতের ভিতরের দিকে কার্যত ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। একদিকে, ইঁদুরের (Rat) দাপট, অন্যদিকে, ফুটপাতে বসানো পেভার ব্লকের নীচে অপরিকল্পিতভাবে সিমেন্ট এবং আনুষঙ্গিক উপকরণে সংমিশ্রণ, দুই কারণে যে কোনও সময়ে ধস নামতে পারে শহরের ফুটপাতগুলির একাংশে। এমনই আশঙ্কা সড়ক নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কলকাতা পুরনিগমের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, শহরে যে পরিমাণ ফুটপাত রয়েছে, তার প্রায় ৬০-৬২ শতাংশের অবস্থা সবথেকে খারাপ। যার নীচের অবস্থা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। যার কারণ হিসাবে ভূ-গর্ভে ইঁদুরের দাপাদাপিকে দায়ী করা হয়েছে। যে কারণে কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম রীতিমত আবেদনের সুরে সব ব্যবসায়ীদের দোকান বা হোটেলের আবর্জনা, বাসি খাবার বা পচা খাবার, সবজি বা অন্যান্য ময়লা রাস্তার ধারে ফেলতে নিষেধ করছেন। সেই আবর্জনা যাতে নির্দিষ্ট ভ্যাটে ফেলা হয় তা দেখতে বলছেন। এই আবর্জনা গুলি খেতেই ইঁদুরের দাপট বাড়ছে ফুটপাতগুলিতে। তাতেই গর্ত করে বসিয়ে দিচ্ছে গোটা এলাকা। এমনটাই মত পুরনিগমের সড়ক বিভাগের বিশেষজ্ঞদের।
কী বলছে কলকাতা পুরনিগম?
পুরনিগমের সড়ক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে শহরের যে ব্রিজগুলির আশপাশে বাজার বসে, সেগুলির নীচের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের নিজেদের সমীক্ষাতে উঠেছে এই তথ্য। যে কারণে কলকাতা পুরনিগমের সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফুটপাতের পেভার ব্লকের নীচে সিমেন্টের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণের যে সংমিশ্রণ ব্যাবহার করা হয়, তাতে কাচের গুঁড়ো ব্যবহার করা হবে। যাতে সিমেন্ট বা মাটি কেটে সম্পূর্ণ ফাঁকা করতে গেলে ইঁদুরের পক্ষে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ররা বলছেন, বছরখানেক আগে দক্ষিণ কলকাতার ট্রাঙ্গুলার পার্কের ফুটপাতে বসানো হয়েছিল নতুন পেভার ব্লক। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, ফুটপাত বসে গিয়েছে জায়গায় জায়গায়। সবটাই যে ইঁদুরের কাজ তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। এরপরই পুরসভা তড়িঘড়ি ইঁদুর তাড়ানোর কাজে নেমে পড়ে। পেভার ব্লকের ফাঁক দিয়ে ইঁদুরের গর্তে প্রচুর পরিমাণ জল ঢোকানো হয় রীতিমতো পাম্প চালিয়ে। কিন্তু তাতে ইঁদুরের ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’ তো দূরের কথা, নিকাশির গালিপিট দিয়ে রাজপথে বেরিয়েই পগার পার তারা!
ফুটপাতের নির্মাণ কৌশলে বদল
এরপরই বিস্তর ভাবনাচিন্তার পর ফুটপাতের নির্মাণ কৌশলে বদল এনেছে পুরসভা। এখন তারা ফুটপাত তৈরিতে ব্যবহার কাচের গুঁড়ো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে নতুন ফুটপাত বানানোর সময় ইট বা পাথরের টুকরো বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে একে একে পেভার ব্লক বসানো হতো। কিন্তু সেই ইট দাঁত দিয়ে কেটে ফুটপাতের নীচে সুড়ঙ্গ তৈরি করতে ইঁদুরের কোনও অসুবিধা হয়নি। তাই এখন ইট বা পাথরের টুকরো বিছিয়ে দেওয়ার পর সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। আর তাতেই কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে কংক্রিটের আস্তরণ আরও কঠিন হবে।
অস্ত্র কাচের গুঁড়ো
মূলত শহরের যে সমস্ত রাস্তা বা ফুটপাতে অনেক খাবারের দোকান রয়েছে, সেখানে এই সমস্যা বেশি। পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা, হাতিবাগান, খান্না, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মানিকতলা, গড়িয়াহাট, হাজরা, বড়বাজার এলাকায় খাবারের দোকান যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে খাদ্যদ্রব্য মজুত করার গুদাম। এসব এলাকায় এই সমস্যা প্রবল। নতুন করে ফুটপাত বানানোর পর তিন-চার মাসের বেশি টিকছে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও ফুটপাত না টিকে যাওয়ায় উদ্বেগে পড়েছেন সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। তবে কাচের গুঁড়ো ব্যবহারে সিদ্ধান্ত নিলেও তা যে যথেষ্ট ব্যয়বহুল তা মেনে নিচ্ছেন পুরনিগমের সড়ক বিভাগের কর্তাদের একাংশ।