কলকাতা: সামনে আসছে প্রতারক সনাতন রায় চৌধুরীর একের পর এক কীর্তি। অমরনাথ মেহেতা নামে যে প্রমোটারের কথা বলে ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনে জমি হাতানোর চেষ্টা করেছিলেন সনাতন, সেই প্রোমোটারেরই খোঁজ মিলছে না। ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের ওই বাসিন্দাকে সনাতন বলেছিলেন, ৬/১ রেড ক্রস প্লেসে অমরনাথ মেহেতার অফিস রয়েছে। কিন্তু সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনও অফিসই নেই। সেখানে রাজভবনের কর্মীদের আবাসন রয়েছে।
সনাতনের কেস যত ঘাঁটছেন তদন্তকারীরা, তাঁদের যেন মনে হতে শুরু করেছে দেবাঞ্জনকেও ছাপিয়ে যেতে পারে এই প্রতারকের কীর্তি। সনাতনও একাধিকবার ভুয়ো পরচিয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করতে গিয়েই।
৮ ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের মালিক পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন, গত ২৭ জুন তিনি একদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, পরিবার সূত্রে পাওয়া ওই সম্পত্তির অন্দরে থাকা অফিসে জাঁকিয়ে বসে রয়েছেন ধৃত সনাতন রায়চৌধুরী। তিনি নিজেকে ‘ডক্টর’ বলেও পরিচয় দেন। সম্পত্তির মালিককে সনাতন জানান, হাইকোর্টের অর্ডার পেয়ে এই সম্পত্তি তিনি দখল করেছেন।
অভিযোগপত্রে জমির মালিক, অমরনাথ মেহেতা নামে এক প্রোমোটারের নাম উল্লেখ করেছেন। এবং তাঁর বাসস্থান হিসাবে উল্লেখ রয়েছে ৬/১ রেড ক্রস প্লেস। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আদতে রাজভবনের কর্মীদের আবাসন সেটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অমরনাথ মাহাতো নামে এক ব্যক্তি সেখানে বহু বছর আগে থাকতেন। তিনি আবাসন ছেড়ে চলে গিয়েছেন দীর্ঘদিন। এবার সেই ব্যক্তিকেই অমরনাথ মেহেতা বলে সনাতন পরিচয় দিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সনাতন রায়চৌধুরী দেশ-বিদেশের একাধিক জায়গায় গিয়েছেন বলে জেরায় দাবি করেছেন। জেরায় সনাতন দাবি করেছেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি হয়ে ব্রিকস সম্মেলনে গিয়েছিলেন। যে সম্মেলনে হাজির ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। ইন্দো জাপান কনফারেন্সেও নাকি অংশগ্রহণ করেছিলেন সনাতন রায় চৌধুরি। এমনকি ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে তিনি লড়েছিলেন। দমদম কেন্দ্র থেকে লোক জনশক্তি পার্টির টিকিটে লড়েছিলেন তিনি। জেরায় তেমনটাই দাবি করেছেন সনাতন। তাঁর বক্তব্য, দমদম কেন্দ্র থেকে লোক জনশক্তি পার্টির টিকিটে লড়েছিলেন তিনি।
সনাতন আদতে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু বেশ কয়েকমাস যাবৎ তিনি দাবি করে আসছিলেন, রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য, সিবিআইয়ের আইনজীবী, মুখ্যমন্ত্রী দফতরের উপদেষ্টা হিসাবে। কিন্তু শেষের দাবিটি করতে গিয়েই ফাঁদে পড়েছিলেন সনাতন। তালতলা থানার ওসির কাছে গত ২৫ জুন সনাতন ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী দফতরের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দেন। তখনই সন্দেহ হয় পুলিশ কর্তার। তিনি একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেন।
আরও পড়ুন: ব্রিকসই নয়, সনাতন নাকি যোগ দিয়েছিলেন ইন্দো জাপান কনফারেন্সেও! চোখ কপালে তদন্তকারীদের
এরপর গোটাটা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে ৩০ জুন। গড়িয়াহাট থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়। ভুয়ো পরিচয় ভাঙিয়ে গড়িয়াহাটের একটি ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিলেন সনাতন। মঙ্গলবার সিঁথি থেকে গ্রেফতার করা হয় সনাতনকে।