কলকাতা: রবিবার রাত থেকে সোমবার সারা সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা — কখনও ঝিরিঝিরি, আবার কখনও ঝোড়া হাওয়া দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি। দেবী বোধনের আগে বাংলায় অকালবর্ষা। পুকুর, রাস্তা, ভেরি, খানাখন্দ, চারিদিক জল থৈ থৈ। কলকাতা সহ শহরতলির গোটা মানচিত্রটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল নদী। এরই মধ্যে মাথার উপর বাজ পড়ার মতো ভাঙল চাল। ভাসল কুমারটুলি। ভিজে কাদা কাদা অবস্থা ‘কাঁচা দুর্গার’।
দুয়ারে জলগ্রাস, মাথায় আশ্রয়হীনতা, কোথায় যাবেন আর শিল্পী। নিরুপায় হয়ে ফোন মন্ত্রীকে। বেজে গেল। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মেসেজ, কোনও উত্তর নেই। একজন মন্ত্রীর সদুত্তর না পেয়ে অন্য মন্ত্রীর দুয়ারে। সেখানেও সাড়া নেই। ফোন বেজে যায়, হোয়াটঅ্যাপে উত্তর আসে না। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরের কাছে আর্তি, সেও নিরুত্তর।
কুমারটুলির প্রতিমা শিল্পী প্রদ্যুৎ পাল সাহায্য চাইছেন। TV9 বাংলার মাধ্যমে তাঁর আবেদন, “সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য চাইছি।” করুণ অবস্থার বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, “টানা বৃষ্টিতে চাল ফুটো হয়ে সারাদিন জল পড়ছে। কোনও রকমে প্লাস্টিক, ত্রিপল দিয়ে ঠাকুর ঢেকে রাখতে পেরেছি। সুজিত বসু, শশী পাঁজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালি সাহাকেও জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি।”
আরও করুণ কাহিনি শোনালেন মৃৎশিল্পীদের নিয়ে তৈরি কারিগর সমিতির সভাপতি অখিল ঘান্তা। করোনার করাল গ্রাসে গোটা বছরটাই নষ্ট হয়েছে। কোনও রোজগারই ছিল না। কোনও রকমে সংসার চলেছে। পুজোর মরশুমে দেড় মাসই কাজ থাকে। এবার ‘অপয়া’ বর্ষা বিপদ আরও বাড়িয়েছে। অখিল জানালেন, “বৃষ্টিতে জল পড়ে ঠাকুর গলে যাচ্ছে। ভিজে ভিজে কাজ করে আমাদের শরীর খারাপ করছে। এই অবস্থায় আমাদের সাহায্য না করলে যাব কোথায়?” আপাতত ত্রিপল, প্লাস্টিক চাইছেন শিল্পীরা। আর এখনই যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, পুজোর আগে বিপাকে পড়তে হবে পুজো আয়োজকদেরও।
মহালয়ার আর বাকি সপ্তাহ দুয়েক। প্রস্তুতি তুঙ্গে। একদিকে চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজ। আর অন্যদিকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা পটুয়াপাড়ায়। পুজোর আগে ‘বর্ষাসুরের’ অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ। এভাবে চলতে থাকলে সময়ে প্রতিমাই পাওয়া যাবে না।
কাজ নেই। কুমারটুলিতে এখন শিল্পীও কম। গঙ্গাপাড়ের শিল্পীপাড়ায় যেখানে এক সময় হাজার, বারোশো কারিগর কাজ করতেন, এখন সেটা দাড়িয়েছ পাঁচ, ছশোতে। তার উপর খামখেয়ালি বর্ষা, খাটুনি আরও বাড়িয়েছে। এখনও যা কাজ বাকি, তাতে পুজোর আগে ঠাকুর ‘ফিনিশ’ করে দেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সব মিলিয়ে প্রশাসনিক সাহায্যেই সমস্যার সাময়িক সমাধান হতে পারে। এরপরও বিলম্বের অর্থ, আরও বিপদ।
আরও পড়ুন: গতবারের দ্বিগুণ প্রতিমার অর্ডার কুমোরটুলিতে