কলকাতা : বুধবার দুপুরে নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রশাসনিক বৈঠকের শুরু থেকেই পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ মমতার। বাগুইআটি কাণ্ড নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। কেন থানাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব? তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। বিশেষ করে কেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলছে? কেন ১৩ দিন নিখোঁজ থাকার পরেও সিআইডি মিসিং স্কোয়াডকে ঘটনার কথা জানানো হল না? তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী ধমক দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ খোদ পুলিশমন্ত্রী। এই ঘটনা নতুন নয়। সাম্প্রতিক অতীতে পুলিশমন্ত্রীর মুখেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের একাধিক উদাহরণ রয়েছে।
সম্প্রতি, হাঁসখালি, বগটুইয়ের মতো বেশ কিছু ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে। এমন সময়ে বার বার মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে পুলিশ প্রশাসনের উপর অসন্তোষের কথা। যখনই কোনও গাফিলতি দেখেছেন মমতা, তখনই তিনি ভর্ৎসনা করেছেন। পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
হাঁসখালিতে গণধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “হাঁসখালিতে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল?” সঙ্গে এও বলেছিলেন, “পুলিশের গাফিলতির জন্য সরকার কেন ভুগবে?” সরাসরি স্থানীয় থানার আইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন পুলিশ সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেয়নি? কিছুটা ধমকের সুরেই জানতে চেয়েছিলেন, কতজনের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কতজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে সেই সব খবর পুলিশ রাখে কি না।
বগটুই হত্যাকাণ্ডের পরও একইভাবে পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বগটুই-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী যখন সেখানে গিয়েছিলেন, তখন গ্রামে দাঁড়িয়েই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময়ও মমতার নিশানায় ছিলেন স্থানীয় থানার আইসি। বলেছিলেন, আইসি, এসডিপিও পুলিশকে ঠিকভাবে কাজে লাগায়নি। সেই জন্যই এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, পুলিশের আরও সজাগ থাকা দরকার ছিল। এমনকী পুলিশের যাঁদের গাফিলতির কারণে এমন কাণ্ড ঘটেছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গতবছরের নভেম্বর মাসের কথা। চিংড়িঘাটায় অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে পর পর পথ দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেতে হয়েছিল পুলিশকে। চিংড়িঘাটার ক্রসিং-এর একটি অংশ পড়ে কলকাতা পুলিশের আওতায় এবং অন্য অংশটি বিধাননগর পুলিশের আওতায়। সেখানেও পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে বলেছিলেন, তাদের ইগোর জন্য কেন সাধারণ মানুষকে ভুগতে হবে? পুলিশকে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন মমতা।
বুধবার আবারও পুলিশের মধ্যে সেই সমন্বয় বাড়ানোর বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে বসিরহাট থানা এবং বাগুইআটি থানার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। দ্রুত যাতে বিভিন্ন থানাগুলির মধ্যে সমন্বয় ফিরিয়ে আনা হয়, সেই বার্তা দিয়েছেন মমতা।