কলকাতা: শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষকরা যে ভাবে নতুন প্রজন্মকে তৈরি করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। মুখ্যমন্ত্রীর আশা এক দিন বাংলার মেধা সারা পৃথিবীতে ভরে যাবে। এই প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বড় হওয়া এক তফশিলি মেয়ের কাহিনি সোমবার শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে তফশিলি, অনগ্রসর জাতির ছেলে মেয়েদের এগিয়ে যেতে সাহায্য় করেন সে কথাও জানিয়েছেন এই কাহিনির মাধ্যমে।
তফশিলির মেয়ের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমার বাড়ি একটি তফশিলি মেয়ে ছোট বেলা থেকে থাকত। আমি এদের প্রমোট করি। বড় করি তার পর চাকরি জোগাড় করে দিয়ে বিয়ে দিই। তখন তাঁরা নিজের মতো দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের বাড়িতে থাকতে থাকতেই ওর বিয়ে হয়। তখন ওর বরকে একটা চাকরি করে দিলাম। ওর একটা মেয়ে হল। মেয়েটা আবার মাধ্যমিক পাশ করল। তার পর মা-মেয়েতে ঝগড়া। মেয়ে কলেজে পড়বে না, আর মা বলছে কলেজে পড়তেই হবে। যখন খুব ঝগড়া, তখন আমি মেয়েটিতে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী পড়তে চাও? তখন সে আমায় বলল, ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে পড়তে চায়। তার মা তো বুঝতেই পারছে না ফ্যাশন টেকনোলজি কী? আমি বললাম যা নিয়ে মন চাইবে তা নিয়েই পড়াশোনা করো। আমি তখন ওকে বললাম, শোন দুর্গাপুরে আমরা আহোরণ বলে রাজ্য সরকারের একটি ফ্যাশন টেকনোলজির ইনস্টিটউট তৈরি করেছি। যখন প্রথম করা হল, আমাকে জানাল জয়েন্ট এন্ট্রান্সে পাশ না করলে ওখানে চান্স পাওয়া যাবে না। আমি বললাম, সবই যদি জয়েন্ট এন্ট্রাসের মাধ্যমে হয়, তাহলে গরিব ছেয়ে মেয়েগুলো কোথায় যাবে? সাধারণ ছেলে মেয়েরা কোথায় পড়বে? ৫০ শতাংশ, ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে যাঁরা পাশ করেছে, তাঁদেরও তো সুযোগ দিতে হবে।”
এর পর মুখ্যমন্ত্রী ফের ফিরে যান তাঁর বাড়িতে বড় হওয়া সেই তফশিলি মহিলার মেয়ের গল্পে। বলেন, “মেয়েটি দুর্গাপুরে ভর্তি হল। পাশও করে গেল। ওরাই চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ও একটা জায়গায় চাকরিও পেয়ে যায়। সাত দিন আগে ওর মা আমায় বলল, ওতো আমেরিকায় চলে গিয়েছে। তখন আমি বললাম, আমেরিকার চলে গেল, আমায় এক বার বললি না। তখন ও বলল, আমেরিকায় একটা হোটেল থেকে ডাক এসেছে। রিসেপসনিস্টের কাজ করার জন্য। এখন তিন লাখ টাকা মাইনে পাবে। ইলেভেনে কলেজে যাচ্ছিল না। তার পর ফ্যাশন টেকনোলজি পাশ করে চাকরি পেল। আবার বেশি টাকার জন্য আমেরিকা চলে গেল। ওখানে তিন লাখ টাকা পেয়ে কী হবে? আমার এখানে ২৫ টাকা পেত, ওখানে থাকতে খেতেই তো সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। বাইরে থেকে পড়ে এখানে চলে এস কাজ করার জন্য।”