কলকাতা: বিধিনিষেধের মধ্যে পুরভোটের প্রচার কীভাবে হবে? নির্বাচন কমিশনের ওপর বিষয়টি ছাড়ছে রাজ্য সরকার। করোনার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জারি হয়েছে বিধিনিষেধ। কোনও সভায় দুশো জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন।
২২ জানুয়ারি শিলিগুড়ি, বিধাননগর আসানসোল ও চন্দননগর পুরসভায় ভোট। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ভোটের প্রচার চলবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। প্রচার সভা, মিছিলে কীভাবে দূরত্ব বিধি মানা সম্ভব, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই বাড়ছে ভোটের উত্তাপ। তবে চার কর্পোরেশনের ভোট প্রচারেই দেখা যাচ্ছে কোভিড বিধি ভঙ্গের অভিযোগ।
দেখা গিয়েছে, কোথাও মাস্ক ছাড়াই প্রচারে বেরিয়েছেন প্রার্থী। যালিতে দূরত্ব বিধি শিঁকেয় উঠেছে। কর্মীদেরও অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ। শিলিগুড়ি, আসানসোল-সর্বত্রই একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
চন্দননগরে ইতিমধ্যে পড়েছে পোস্টারও। তাতে লেখা রয়েছে, “করোনার প্রকোপ থেকে চন্দননগরকে বাঁচাতে বন্ধ হোক অকাল পৌরভোট।” তবে কে বা কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে তা জানা যায়নি। বিজেপি বলছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জের, আর তৃণমূল বলছে, বিরোধীদের চক্রান্ত। তবে এসব নিয়ে ভাবিত নন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা উদ্বিগ্ন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে।
বড়দিন থেকে বর্ষবরণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় চলেছে হুল্লোড়। দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু হাজার ছাপিয়েছে। উৎসবের রেশের মাঝেই আবার ভোট! ফলে চিন্তা বাড়াচ্ছে আরও। বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতা, সকলেরই ক্ষোভ রাজনৈতিক নেতাদের ওপরেই। কেন তাঁরা এই পরিস্থিতিতে ভোট-ভোট করছেন? প্রশ্ন করছেন সকলেই। এই পরিস্থিতিতে ভোট করাটা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত?
কোপ পড়েছে, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। সোমবার থেকে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সমাজ এগোতে চাইলে স্কুল চালাতেই হবে। বিনোদন পার্ক, মল বন্ধ রাখা যেতে পারে। স্কুল বন্ধ হলে সমাজের অত্যন্ত ক্ষতিকারক।” সেক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের আরও বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
যদিও রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, বিধি মেনেই প্রচার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য কলকাতা পুরসভার মেয়রের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল ভিড়ে ঠাসা। শারীরিক দূরত্ববিধিরও কোনও বালাই ছিল না। তারপর একে একে অসুস্থ হয়েছেন অনেকে। সকলেরই রিপোর্ট এসেছে পজেটিভ। করোনার বাড়বাড়ন্তে রাজ্য সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন বিরোধীরাও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “পার্কস্ট্রিটের জনজোয়ার আর মেয়রের শপথগ্রহণ থার্ড ওয়েভের আঁতুড়ঘর।”
রাজ্যের পরিস্থিতি হচ্ছে জটিল। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। গত একদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২ হাজার ৪০৭ জন। শতাংশের হারে ৯৭.৭৭ শতাংশ। পজিটিভি রেটও বাড়ছে হু হু করে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রেট ১৫.৯৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৮,৬৩৩। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ভোটের প্রচার চলবে, তা নিয়ে সত্যিই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।