কলকাতা: ধুত্তোর। আর ভাল লাগছে না। এই বলে, যেই না মন খারাপ খারাপ হয়েছে। অমনি এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট। উল্টে দেখুন, পাল্টে যাচ্ছে বলে একদল দামাল ছেলে রাস্তাঘাটে নেমে পড়ল। বলল, মাত্র ছটা মাস অপেক্ষা করুন। তারপর দেখতে পাবেন নতুন তৃণমূল কেমন দেখতে। হুঁ হুঁ বাবা। সেই তো বাবুল সুপ্রিয় কবেই বলেছেন, এই তৃণমূল আর না। তৃণমূল এখন নিজেই বলছে, এই তৃণমূল আর না। জীর্ণ, পুরাতন, যাক ভেসে যাক, বলে আগামীর আহ্বানে জোরকদমে প্রস্তুতিও শুরু গেছে। আজ দক্ষিণ তো কাল উত্তর কলকাতায় হোর্ডিং পড়ছে, দেখেননি। শুধু দেখলে হবে? কান খোলা রাখুন, শুনতেও পাবেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এবার পঞ্চায়েতের ডিরেক্টর আর জেলার নেতারা নন। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। না, না বালিয়া জেলার ফুলেরা গ্রামের কথা নয়। ওয়েব সিরিজ পঞ্চায়েতের সিজন থ্রি-র কথা বলছি না। বলছি, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা। তৃণমূল ঠিক করেছে, প্রার্থীর বায়োডেটা পরীক্ষা করে তবেই টিকিট দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা নেতাদের খবরদারি একদম মানা হবে না। মাতব্বরি না করে, শীর্ষ নেতৃত্ব যা বলছে, সেটাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। এব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল নেতাদের ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে। শুভেন্দু গড় পূর্ব মেদিনীপুরের জন্য বার্তা গেছে আজ। কাল আরও পাঁচ জেলার জন্য যেতেই পারে একই নির্দেশ। ইমেজ ঘষে মেজে পরিস্কার করার কাজ চলছে জোরকদমে। আর একটু পা চালিয়ে এগিয়ে গেলেই, শুদ্ধিকরণ সম্পূর্ণ হবে। ছ’মাস পার করতে তো আর কটা দিন। দেখতে দেখতে কেটে যাবে। শুধু মির্জা গালিব মনের ভিতর একটু কিন্তু কিন্তু জাগিয়ে রাখছেন। ওই যে গালিব একবার লিখেছিলেন, তা উমর গালিব এ ভুল করতা রহা। ধুল চেহরে পে থি। অওর আয়না সাফ করতা রাহা। বাংলা করলে যার মানে দাঁড়ায়, গালিব আজীবন একটাই ভুল বারবার করে গেল। তার মুখে ধুলো লেগে ছিল। আর সে আয়না পরিষ্কার করে গেল। এই শায়েরি গালিব লিখেছিলেন কলকাতায় বসে। কে জানে, সেই একই ভুল এখনও কেউ করে কি না!
যাক এসব কথা। রবীন্দ্রনাথ ওখানে কখনও খেতে যাননি। আজ অনুব্রত মণ্ডল গিয়েছিলেন। একা কি আর যেতে পারেন? আসানসোল যাওয়ার পথে, সিবিআই নিয়ে গিয়েছিল। শক্তিগড়ে এক ধাবায় ব্রেকফাস্ট করেন সবাই। কী খেলেন? ল্যাংচা। প্রশ্ন করতেই, প্রচণ্ড জোর মাথা ঝাঁকিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। নেতিবাচক সেই ভঙ্গির পরেই ভুল ভেঙেছে। গুড় বাতাসা, নকুলদানার প্রবর্তক মানুষটির মুখেই শুধু মিষ্টির কথা। ওসব তিনি খান না। অনুব্রত মণ্ডলের জীবনে চিনি কম। একদম কম। সুগারের রোগী বলে কথা। মিষ্টি খাওয়া কি মানায়! বীরভূমে কান পাতলে এখন শোনা যাচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডল সত্যিই মাটির মানুষ। কত জমি যে লোকজন তাঁকে দান করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এইসব কিছুই এখন খুঁজে বের করছে সিবিআই। তাই জামিনের আর্জি খারজি করে, অনুব্রতকে চোদ্দো দিনের জন্য জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত।
কারাগারে কেষ্ট। তদন্তকারীরা খুঁজছেন গরু পাচারের নেপথ্যের গল্প। খোঁজ শেষ হলে, বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল। বিচারের আশাতেই তো দিন গুনছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের কথা উঠতেই মনে পড়ল, সুকান্ত মজুমদারের কথা। সদ্য ফ্রেন্ডশিপ ডে গিয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতিও বন্ধু খুঁজছেন। রাজ্যের বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, সব দলকে একজোট হয়ে লড়ার বার্তা দিয়েছেন সুকান্ত বাবু। মজা হচ্ছে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সুকান্ত মজুমদার তৃণমূল কর্মীদেরও সমর্থন চেয়েছেন। তাঁর ফেসবুক পোস্ট তাই বলছে। এখন দেখার, সুকান্তবাবুর এই পত্রমিতালির আব্দারে কজন সাড়া দেন। বা আদৌ দেন কি না। দলের গণ্ডি কাটিয়ে এই যে সুকান্ত মজুমদার বন্ধু খুঁজছেন, কেন বলুন তো? বিজেপিতে কি তাঁর বন্ধু কম পড়ল?
এই সব নিয়েই কথা হবে। রাত ৮.৫৭, টিভি নাইন বাংলায় শুরু হবে না বললেই নয়।