এজেন্সিই সব করে! ফাইলে ‘নোট’ দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন সরকারি চাকুরীজীবীদের

সৌরভ পাল |

Jan 01, 2021 | 5:59 PM

স্বাস্থ্য দফতরের আইইসি ডিভিশনের কাজের জন্য বছরে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার চুক্তিতে বালিগঞ্জের একটি বেসরকারি সংস্থাকে কেন বরাত দেওয়া হয়েছে, উঠেছে প্রশ্ন।

এজেন্সিই সব করে! ফাইলে নোট দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন সরকারি চাকুরীজীবীদের

Follow Us

সৌরভ দত্ত: সরকারি বিভাগে ‘দক্ষ’ স্থায়ী আধিকারিক-কর্মী রয়েছেন। প্রতি মাসে তাঁদের সম্মিলিত বেতনের পরিমাণ প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। এরপরও স্বাস্থ্য দফতরের আইইসি ডিভিশনের কাজের জন্য বছরে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার চুক্তিতে বালিগঞ্জের একটি বেসরকারি সংস্থাকে কেন বরাত দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

কমিউনিকেবল এবং নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ- দু’ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই প্রতি বছর সচেতনতা প্রচারে নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে থাকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই সচেতনতা প্রচার সংক্রান্ত পোস্টার, হোর্ডিং, বিজ্ঞাপনের বয়ান লেখার দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের ইনফরমেশন, এডুকেশন এবং কমিউনিকেশন (আইইসি) বিভাগে। ডেঙ্গি, করোনা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, টিকাকরণ কর্মসূচি-সহ বিভিন্ন রোগ রোধে আইইসি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক প্রচারের ফলেই ডেঙ্গি-করোনার মোকাবিলায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান চমকপ্রদ বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দু’দিনের গঙ্গাসাগর সফরে মমতা

এই কাজের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ভবনের একতলায় আইইসি বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগের সিনিয়র এডিটর, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, ডিজাইনার, আউটডোর পাবলিসিটি অফিসার, অডিও ভিস্যুয়াল অফিসার-সহ মোট ১১ জন আধিকারিক-কর্মী স্থায়ী পদে কাজ করেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তার অন্তর্গত বিভাগটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ‘স্টেট মাস এডুকেশন ইনফরমেশন অফিসার’ (এসএমআইও)। কিন্তু এজেন্সির ‘অনুপ্রবেশে’ সেই সরকারি কর্মীদের ফাইলে নোট দেওয়া ছাড়া কার্যত কোনও কাজ নেই।

এ ধরনের পরিকাঠামো থাকার পরও বেসরকারি সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত কেন? বছর চারেক আগে প্রথম বালিগঞ্জের একটি বেসরকারি সংস্থাকে আইইসি বিভাগের কাজ (মেমো নম্বর.এইচএফডব্লিউ/এনএইচএম-৪৪৬/২০১৮/৮৫৮) আউটসোর্স করে দেওয়া হয়। একবছর পরে চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য রাজ্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাছে আর্জি জানায় বেসরকারি সংস্থা।

আরও পড়ুন: ব্রিটেন ফেরত আরও এক যুবকের শরীরে করোনা ভাইরাস, নতন স্ট্রেন কিনা জানতে পরীক্ষা

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কনসালটেন্সি এবং ডিজাইনিং সার্ভিসের জন্য ওই সংস্থাকে ‘অফার অব এগেজমেন্ট’ (সংশ্লিষ্ট নথির প্রতিলিপি টিভি নাইন বাংলার কাছে রয়েছে) দেয় স্বাস্থ্যভবন। সেখানেই এই কাজের জন্য প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে বছরে তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ওই সংস্থা মোট চার লক্ষ ৮২ হাজার ৬২০ টাকার বিল জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কনসালটেন্সি চার্জ হল ২ লক্ষ ১২ হাজার ৪০০ টাকা। হ্যান্ডবুক প্রকাশের জন্য ৪৭ হাজার ২০০ টাকা। স্বাস্থ্যভবনের জন্য আটটি পোস্টার তৈরি করতে ৮৪ হাজার ৯৬০ টাকার বিল ধরিয়েছে বেসরকারি সংস্থা। আর ডেঙ্গির জন্য ১৩টি পোস্টারের খরচ এক লক্ষ ৩৮ হাজার ৬০ টাকা!

বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি কি এখনও কার্যকর রয়েছে? দু’হাজার কুড়ি সালের মে মাসে রাজ্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিরেক্টরকে দেওয়া একটি চিঠিতে বরাতপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার লিখেছেন, “কোভিড মহামারী এবং তার জেরে শুরু হওয়া লকডাউনের জন্য আমি চুক্তি পুনর্নবীকরণের আবেদন করতে পারিনি। কিন্তু, ৩১ জানুয়ারি ২০২০ সালে চুক্তি শেষ হওয়ার পরও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এবং স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক প্রকল্পে আমার সংস্থা কাজ করেছে।”

আরও পড়ুন: শনিবার পশ্চিমবঙ্গের তিন জায়গায় করোনা ভ্যাকসিনের ড্রাই রান! জেনে নিন জরুরি বিষয়

স্বাস্থ্য দফতর সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরাতপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার কর্তা অজয় জন। তাঁর কথায়, “স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আমাদের চুক্তি এখনও বহাল রয়েছে। আমাদের সংস্থা আগের মতোই স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করছে।”

বিভাগীয় কর্মীদের উপস্থিতিতে বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া নিয়ে মিশন ডিরেক্টরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ই-মেলে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সচেতনতা পোস্টার-সহ সৃষ্টিশীল কিছু কাজের জন্য ওই সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। এর জন্য যে অর্থ খরচ হচ্ছে তা খুব বেশি নয়। কাজের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

Next Article