কলকাতা: সামনেই বড়দিন। তারপর বর্ষবরণ। আর এই উৎসবের মরশুমে ফের নৈশকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করছে রাজ্য সরকার। বড়দিন এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে, ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। বুধবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন।
নৈশকালীন বিধিনিষেধ অনুযায়ী বর্তমানে রাত ১১ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত জরুরিকালীন প্রয়োজন ছাড়া সাধারণের রাস্তায় বেরোনোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পূর্বের নির্দেশিকার মেয়াদ ১৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবার পূর্বের বিধিনিষেধ ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নৈশকালীন কড়াকড়ি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই দিনগুলিতে সমস্ত দোকান, রেস্তরাঁ এবং বার স্বাভাবিক সময় মতোই খোলা রাখা যাবে। নিয়ম মেনে বারগুলিকে বেশি সময় খোলা রাখারও অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে রাস্তায় বেরোলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মেনে চলতে হবে শারীরিক দূরত্ববিধি। এছাড়া অন্যান্য করোনা বিধিও যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
সাম্প্রতিক অতীতে দুর্গাপুজো হোক বা কালীপুজো… বিভিন্ন উৎসবের মরশুমগুলিতে নৈশকালীন বিধিনিষেধের লাগাম আলগা করতে দেখা গিয়েছে। এমনকী ইডেনের ক্রিকেট ম্যাচের রাতেও শিথিল ছিল কড়াকড়ি। কিন্তু রাত্রিকালীন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কি খুব প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল সরব হয়েছে। দুর্গাপুজোতেই দেখা গিয়েছে রাত জেগে মানুষের উৎসবে ভেসে যাওয়ার ভয়ঙ্কর সেই প্রবণতা। এরপরই হু হু করে বেড়েছে করোনার প্রকোপ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে ১১ টা অবধিই না হয় এ বছরটা মানুষ পথে নামতেন। আনন্দ উচ্ছ্বাস কি খুব কম হয়ে যেত তবে ?
তার উপর আজই রাজ্যে প্রথম ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক TV9 বাংলাকে জানিয়েছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। কিন্তু, সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যধিক হলেও এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের মারণ ক্ষমতা অনেক কম। কিন্তু, সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তা ক্ষতিকর। এই পরিস্থিতে নমুনা পরীক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জিনোম সিকোয়েন্সে পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
চিকিত্সক সুমন পোদ্দার জানিয়েছেন, ওমিক্রনের মারণক্ষমতা কম বলে তাকে হালকা ভাবে দেখা কিছু নেই। আবার সংক্রমণ ভীষণভাবে ছড়ায় বলে অতিরিক্ত ভাবারও কিছু নেই। পরিস্থিতিতে থেকেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। পুরনো নিয়ম মেনে টিকাকরণ, সামাজিক দূরত্ববিধি পালন, মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি, প্রয়োজনে টিকার বুস্টার ডোজ়ও নিতে হতে পারে।
রাজ্যে যখন ওমিক্রন দাঁত-নখ বেরোতে শুরু করেছে, তখন আবার রাজ্যে বড়দিন এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে নৈশকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করার আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল কি না, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।