কলকাতা: কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ৪০০০। একের পর এক এলাকা থেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের মৃত্যুর খবর আসছে। যদিও সরকারি হিসেব বলছে, এখনও কলকাতায় মৃতের সংখ্যা ৩। মঙ্গলবারও শহরের সরকারি হাসপাতালে নেতাজি নগরের এক ডেঙ্গি আক্রান্ত গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সেই এলাকা থেকে ঠিক ৩.৬ কিমি দূরে তখন ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যস্ত কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা। জায়গাটি দক্ষিণ কলকাতার কিডনি বলে খ্যাত বিক্রমগড় ঝিল। আবর্জনা এবং কচুরিপানায় ভরপুর বিক্রমগড় ঝিলের দুপাশে ড্রোন ব্যবহার হয়েছে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য। যাদবপুরই বর্তমানে কলকাতার অন্যতম ডেঙ্গি হটস্পট। গত সাত দিনে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এই এলাকার মোট তিনটি জায়গা সবথেকে ভয়াবহ এলাকা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে কলকাতা পৌরসভার আধিকারিকদের রিপোর্টে। তালিকায় প্রথমেই রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয়টি কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরি এবং তৃতীয় বিক্রমগড় ঝিল। এদিন সেই ঝিলেই কীটনাশক স্প্রে করা হয়।
পুরনিগমের মুখ্য পতঙ্গবিদ ডঃ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “বিক্রমগড় এলাকায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু যাদবপুর যেহেতু হটস্পট হয়ে রয়েছে, তাই ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী ইডিস ইজিপটাই মশা এই ঝিলের চারপাশে জমে থাকা বিভিন্ন পরিত্যক্ত সামগ্রী বা থার্মোকলের বক্সে জমা জলে ডিম পাড়তে পারে। সে কারণেই এই দিন স্প্রে করা হয়েছে রাসায়নিক।” কলকাতা পুরসভার ৯৩ এবং ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের মূলত সীমানা ভাগ করেছে এই ঝিল। দুটি ওয়ার্ডেই ভয়ঙ্কর অবস্থা ডেঙ্গিতে। বিশেষ করে, ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড সবথেকে বেশি বিপর্যস্ত ডেঙ্গিতে। আর সেই ওয়ার্ডের অন্তর্গত ঝিলের ভয়ঙ্করতম অবস্থা দেখে রীতিমতো চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা।
অন্যদিকে কলকাতা পুরনিগমের ১০ নম্বর বোরোতে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে কলকাতার মধ্যে সবথেকে বড় বোরো হচ্ছে ১০। সেই বোরোর অধীনস্থ এই ওয়ার্ডগুলি নিয়ে চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে কলকাতা পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের। এদিকে বিক্রমগড় ঝিল সংস্কার নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘদিনের। ঝিলের বেহাল অবস্থা জেরে মশার দাপট গোটা এলাকা এবং আশপাশের অংশে। এই ছিল সংস্কারের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বরাদ্দ টাকায় সংস্কারের কাজ শুরু হলেও মাসখানেকের মধ্যেই তা স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্থের অভাব বা পরিকল্পনার খামতির জন্য নয়, ঝিলের আশপাশে রাজনৈতিক দলের মদতে গজিয়ে ওঠা গ্যারাজ এবং সারি সারি দোকানের জন্যই যাবতীয় পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে চলে যায় বলে শোনা যায়। এই দখলদারদের হটাতে শুরু হয় শাসকপক্ষর মধ্যে দড়ি টানাটানি। মুখ্যমন্ত্রী ২ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করলেও অভিযোগ, ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় করা যায়নি। প্রায় ১৪ একরের ঝিল বুজে এখন আট একরে এসে দাঁড়িয়েছে। ঝিলের পাড় বাঁধা থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার-একাধিক সংস্কার প্রক্রিয়া তিন দফায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তিন দফা তো দূর অস্ত, এখনও প্রথম দফার কাজই শেষ হয়নি। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিক্রমগড় ঝিল উন্নয়ন তহবিলে টাকা পড়ে থেকে থেকে ফিরে যায়। ঝিল সংস্কারের জন্য শাল-বল্গা ৬০ শতাংশ পোঁতা হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ দ্রুত শেষ করা হবে। ঘর-বাড়ি উচ্ছেদ নয়, তবে অস্থায়ী বেদখল গ্যারাজ বা অন্য কোনও অস্থায়ী ছাউনি থাকলে, তা সরিয়ে দেওয়া হবে বলে পুরসভা এবং প্রশাসন থেকে বারবার দাবি করা হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।
এদিন শুধু বিক্রমগড় ঝিল নয়, রাজ্য সরকারের অধীনস্থ খাদ্য সরবরাহ ও বণ্টন দপ্তরের অধীনে থাকা লেক গার্ডেন্সের একটি পরিত্যক্ত জমি, গোডাউন পরিদর্শন করেন কলকাতা পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের জমিতে পরিত্যক্ত সামগ্রীতে জীবাণুবাহী মশার লার্ভায় ভরপুর। আবর্জনা এবং জঞ্জালে ভরে রয়েছে গোটা অংশ। সেই জমির জন্য আশপাশের এলাকা মশার চরম দাপট। ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষের প্রাণ। সেখানেও এদিন ড্রোন দিয়ে রাসায়নিক স্প্রে করা হয়। সরকারি জমি হলেও কলকাতা পুরনিগমের তরফে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল। এদিন গিয়ে দেখা যায় তারপরেও কোন কিছু হয়নি। তাতেই আরও বাড়ছে উদ্বেগ।