কলকাতা: এ এক অন্য বেলাশেষের গল্প। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে স্ত্রীকে বিচ্ছেদ দিতে চান স্বামী। প্রায় পঞ্চাশ বছর এক ছাদের তলায় কাটানোর পর কেন এই সিদ্ধান্ত? এবার কি তবে নতুন পথচলা শুরু?
বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের আকছার হয়। ভেঙে যায় বহু সংসার। কিন্তু তা বলে বিয়ের পঞ্চাশ বছর পর? জীবনের প্রায় শেষলগ্নে এসে আদালতে বিবাদ বিচ্ছেদের মামলা ঝাড়গ্রামের সালকিয়ার বাসিন্দা পুরুষোত্তম মণ্ডলের। সংসারের নানা খুঁটিনাটি দেখতে দেখতেই বিয়ের পর পুরুষোত্তম বাবুর সংসারে প্রায় ঊনপঞ্চাশ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন পুষ্পরানি। আদালতে পা দিয়ে নতুন স্বপ্নে দেখছেন। বিচ্ছেদ নিয়ে কী বলছেন তিনি?
পুষ্পরানি মণ্ডল বলেন, ‘ওনার সঙ্গে থাকব কী করে? উনি যে কোনও সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। আর আমার উপর যা অত্যাচার সত্যি বলছি আর সহ্য করতে পারছি না।’
বৃদ্ধ দম্পতিকে আপাতত একসঙ্গেই থাকার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। ছেলেদের উভয়ের দায়িত্ব নিতে বলেছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে মায়ের মুক্তির স্বপ্নে পাশে আছেন বড় ছেলে গৌরপদ মণ্ডল।
বড় ছেসে গৌরপদ মণ্ডল বলেন, ‘প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আমি মা-কে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। মায়ের পক্ষে আইনের বিচার চেয়ে ন্যায় তুলে আনা কঠীন ব্যাপার।’
জীবনভর স্বামীর অত্যাচারের অভিযোগ। শেষ বয়সে তারই বিবাহ বিচ্ছেদের আর্জিতে আদালতের চক্কর কাটা। সবমিলিয়ে এক অদ্ভুত দোলাচলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন পুষ্পরানি। এদিকে বিচ্ছেদ চাইলেও ছেলেদের ওপর ভুল বোঝানোর দায় চাপাচ্ছেন পুরুষোত্তমবাবু। জীবনের শেষবেলায় স্ত্রীকে পাশে চান বলেও জানিয়েছেন।
মামলাকারী পুরুষোত্তম মণ্ডল বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকব। এতদিন একসঙ্গে থেকেছি, খেলেছি, হেসেছি। তবে আমার ছেলে মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা। মাকে যা বলছে, মা তাই বুঝছে। এই বয়সে আমি খেতে পারছি না। ও খেতে পারছে না…’
একে অপরের হাত ছেড়ে শেষবয়সে আলাদা পথে চলা নাকি ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে একে অপরের ভরসা হয়ে পাশে দাঁড়ানো? কী হবে পুরুষোত্তম-পুষ্পরানির ভবিতব্য? চশমার আড়ালে থাকা চোখগুলো সেই জবাবের অপেক্ষায়।