কলকাতা: ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় মঙ্গলবার সিবিআই দফতরে যান নিহত অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। অভিজিতের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। সেই রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি নিয়েই এদিন নিজাম প্যালেসে যান বিশ্বজিৎ সরকার।
সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “আদালতের নির্দেশ ছিল কপিটা জমা দেওয়ার জন্য। আজ আমরা শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করেছিলাম অভিজিৎ সরকারের ডিএনএ টেস্ট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার জন্য। এই পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই রিপোর্টের সঙ্গে যদি অভিজিতের ডিএনএ ও পোস্ট মর্টেমের তথ্য মিলে যায় তা হলে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমরা তা হলে মৃতদেহ সৎকার করব। এতদিন হয়ে গেল।”
বিধানসভা নির্বাচনের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতি। ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকারকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই খুন করা হয় তাঁকে। তারপর থেকে বিচারের আশায় থানা, আদালত সর্বত্রই ছুটেছে পরিবার। ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার পুরো তদন্তভার এখনও সিবিআই-এর হাতে। হয়ত সুবিচার মিলবে এক দিন, এই আশাতেই বুক বাঁধে পরিবার। কিন্তু ছেলের আত্মার শান্তিটুকু কামনা করার অধিকার মেলেনি পরিবারের।
তদন্তের স্বার্থে এখনও অভিজিৎ সরকারের দেহ সৎকার করতে দেওয়া হয়নি। এখনও কমান্ডো হাসপাতালের মর্গে রয়েছে সেই দেহ। পচে-গলে সেই দেহ আর চেনার কোনও উপায় নেই। অভিজিৎ সরকারের পরিবারের তরফে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ওই দেহ আদৌ অভিজিতের? তাঁদের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় দেহ সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তাই মর্গে আদতে কার দেহ রয়েছে, তা এখনও জানে না পরিবার। ইতিমধ্যেই ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে ওই দেহের। কিন্তু যেহেতু ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তাই আপাতত সেই ডিএনএ রিপোর্ট আছে সিবিআই-এর হাতে। ডিএনএ রিপোর্ট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে অভিজিতের পরিবার। সত্যিই কি মর্গে শুয়ে আছেন অভিজিৎ? অন্তত সেটুকু জানতে চায় তারা।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলার তদন্ত ভার গ্রহণ করেছে সিবিআই। তদন্তে গঠিত হয়েছে সিটও। গত কয়েকদিনে একাধিকবার সিবিআই দফতরে গিয়েছেন অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ। তাঁর কাছ থেকে আধিকারিকেরা ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন বলে সূত্রের খবর। ঘটনার দিন কারা উপস্থিত ছিলেন, কী ভাবে পুরো ঘটনা ঘটল, সেই বিষয়ে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে সিবিআই। পাশাপাশি, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অভিযুক্ত পাঁচজনকে চিহ্নিত করেছেন অফিসারেরা। একই সঙ্গে বিশ্বজিৎ সরকার ভাইয়ের মোবাইল ফোন থেকে বেশ কয়েকটি তথ্যপূর্ণ ভিডিয়োও সিবিআইকে দেখিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত কোন দিকে এগোয় তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে বুধবার শিয়ালদহ আদালতে যে শুনানি রয়েছে, সেখানে ময়না তদন্ত ও ডিএনএ রিপোর্টের নিরিখে বিচারক কী রায় দেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। আরও পড়ুন: ঘন রহস্যের চাদরে ঢাকা মা-ছেলের খুনের ঘটনা! এবার চাঞ্চল্যকর দাবি তমোজিতের স্কুলের