কলকাতা: দুবাইতে তাঁর বাড়ি আছে। বন দফতরে নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন। একুশের ভোটের প্রচারে হাওড়াতে গিয়েই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) কে তুলোধোনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কটাক্ষ করেছিলেন ‘হরিদাস মন্ত্রী’ ও ‘গদ্দার’ বলে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও শুরু হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা। সেই রাজীব ফের যোগ দিলেন তৃণমূলে। এখন কি সেই দুর্নীতির তদন্ত চলবে? প্রশ্ন বিজেপির।
ভোটের সময় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীবকে নিয়ে মমতা বলেছিলেন,‘‘যে ছেলেটা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে, বন সহায়ক পদে নিয়োগ নিয়ে ও কিছু কারসাজি করেছে। আমরা তার তদন্ত করছি। আজ থেকে ৭-৮ দিনের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে আমরা করতে পারব না। কিন্তু তদন্ত চলবে। কিন্তু এর পরে আপনারা যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের দাবি সত্যি হলে আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’’
শুধু তাই নয়, মমতা এও অভিযোগ করেন, দুবাইতে বাড়ি আছে রাজীবের। হাওড়ায় কর্মিসভা থেকে বলেছিলেন, “ডোমজুড়ের কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ, গত বছর এখানে গদ্দারকে প্রার্থী করেছিলাম। গদ্দার জনগণের টাকা মেরেছেন। আমায় বলেছিল, ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট দেওয়া হোক। যাতে আরও কমিশন নিতে পারে। সেচ দফতরে দুর্নীতি করে অনেক টাকা করেছে। অভিযোগ আসায় ওকে সেচ দফতর থেকে সরিয়ে দিই। পরে বন দফতর দিই। বুঝতে পারিনি তার ভিতরে এত প্যাঁচ রয়েছে। কলকাতায়, দুবাইয়ে অনেক সম্পত্তি করেছে। যাও মানুষকে জবাব দাও। তারপর ভোট চাও। আগে জানলে ওকে অনেক আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আবার গানের ক্যাসেট বের করছে… সবই নাকি উনি করেছেন! তাহলে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়োজন ছিল না। উনি একটা হরিদাস মন্ত্রী।”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে বন সহায়ক পদে নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বনবস্তির বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতা রেঞ্জ, জলপাইগুড়ির খুনিয়া রেঞ্জ, ময়নাগুড়ির রামশাই রেঞ্জ, গরুমারা নর্থ রেঞ্জ-সহ অধিকাংশ জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভও হয়েছে। এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে তোলা মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ তখন উড়িয়ে দিয়েছিলেন রাজীব।
কিন্তু অভিযোগ তো এখানেই শেষ হয়নি। এর পর আসে ইয়াস-পর্ব। ইয়াসে কেন বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে তা নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তদন্তের নির্দেশও দেন। নাম না করলেও আঙুল দুই প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। সেই রাজীব রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় আবার তৃণমূলে যোগ দিলেন। কিন্তু এখন কোন পথে যাবে সেসব মামলা?
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য বিজেপির মুখ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের খোঁচা, “বন সহায়ক পদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। আসন সংখ্যা প্রথমে ৯০০ থাকলেও পরে ৩ হাজারের বেশি সেখানে নিয়োগ হয়। ১০ লক্ষ আবেদনকারী ছিল। দেড় মাসে ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ইন্টারভিউ নিয়ে তাঁদের নিয়োগ কী ভাবে সম্ভব হল, কোথায় তালিকা তৈরি হল এই প্রশ্ন আমরা তুলেছিলাম। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসেও এ নজির নেই। হাওড়ার বেশ কিছু গৃহবধূকেও আমরা দেখেছি তাঁরা এখন অরণ্য ভবনে। এটা নিয়ে আমরা তদন্ত চেয়েছিলাম। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন এটা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত চাই। তিনি সম্ভবত একটি তদন্ত কমিটিও করেছেন। এখন আমরা অধীর অপেক্ষায় ওই তদন্ত শেষে হয় কি না তা দেখার জন্য।”
আবার রাজীবের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে ব্যথিত সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘তবে গত ভোটের সময় মমতাদি ডোমজুড়ে প্রচারের গিয়ে যে বলেছিলেন, গড়িয়াহাটে তাঁর ৩-৪ টে বাড়ি আছে, টাকার লেনদেন দুবাইয়ে? তা সত্ত্বেও কেন তাকে দলে নেওয়া হল তা শীর্ষ নেতৃত্বই বলতে পারবেন।’ তাঁর সংযুক্তি ‘রাজীব টপ টু বটম কোরাপটেড।’
আরও পড়ুন: Rajib Banerjee Joins TMC: ‘আগেই বলেছিলাম রাজীব বঙ্গ বিজেপির সিলেবাসে নেই’! স্মরণ করালেন শমীক