কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা অবশেষে পরীক্ষা করা হবে। বুধবার সন্ধেয় হঠাৎ এসএসকেএম হাসপাতালে তৎপরতা ইডির। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। সুজয় ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে অ্যাম্বুল্যান্সে করে জোকা ইএসআইতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আজ রাতেই কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হতে পারে। কিন্তু কীভাবে হয় এই ভয়েস স্যাম্পেল পরীক্ষা? তা নিয়ে কৌতুহল জমেছে অনেকের মনেই। কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ফরেন্সিক ভয়েস অ্যানালিসিস… সেই বিষয়টি আসলে কী? টিভি নাইন বাংলায় সহজ সরল ভাষায় বোঝালেন সিনিয়র নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্জুন দাসগুপ্ত।
কণ্ঠস্বরের ‘পিচ’ বা তীক্ষ্ণতা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়। ফরেন্সিক ভয়েস অ্যানালিসিসের মাধ্যমে, দু’টি কণ্ঠস্বরের নমুনা একই ব্যক্তির কি না, তা বোঝা যায়। যাঁরা এই কণ্ঠস্বরের নমুনা বিশ্লেষণ করেন, তাঁরা কোনও ব্যক্তির কথা বলার ধরন, কীভাবে কথা বলছেন, কথা বলার সময় কোথায় কোথায় থামছেন… সেগুলি যাচাই করে দেখেন। এরপর পূর্ববর্তী নমুনার সঙ্গে কতটা মিলছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
কীভাবে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? চিকিৎসক অর্জুন দাসগুপ্তর জানাচ্ছেন, ভয়েস স্যাম্পেল সংগ্রহের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণত যাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হবে, তাঁকে কোনও একটি লেখা পড়তে বলা হয়। তখন সেই কণ্ঠস্বরকে ডিজিটালি রেকর্ড করা হয়। এরপর অন্য কোনও জায়গা থাকে পাওয়া কণ্ঠস্বরের নমুনার সঙ্গে সেটি মিলিয়ে দেখা হয়। এর থেকেই বোঝা যায় দু’টি কণ্ঠস্বর একই ব্যক্তির কি না।
তবে যে কোনও ইএনটি চিকিৎসক এই ভয়েস স্যাম্পেল সংগ্রহ করতে পারেন না বলেই জানাচ্ছেন তিনি। কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন, যাঁরা এই নমুনা সংগ্রহের কাজে সিদ্ধহস্ত। তাঁর মতে, প্রক্রিয়াটি খুব সহজ নয়। আঙুলের ছাপ যাচাই করার ক্ষেত্রে যতটা নির্ভুল হয়, হাতের লেখা বা ভয়েস স্যাম্পেল ততটা নির্ভুল নাও হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সুজয় ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা করেছিল ইডি। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে সেই সময় আপত্তি জানানো হয়েছিল। তাহলে কি ভয়েস স্যাম্পেল নেওয়ার সময় কোনও বিশেষ শারীরিক পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখতে হয়? প্রশ্ন করা হলে চিকিৎসক অর্জুন দাসগুপ্ত জানান, ‘কারও গলায় বিরাট কোন সমস্যা থাকলে, সেক্ষেত্রে ভয়েস রেস্ট দেওয়া হয়। এমন কোনও পরিস্থিতি হলে, ডাক্তার বলতে পারেন ওই সময়ে কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়া যাবে না। তবে বিষয়টি যিনি চিকিৎসার দায়িত্ব আছেন, তিনিই বলতে পারবেন।’