কলকাতা : গোলকোন্ডা ফোর্ড থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বহু মূল্যবান হিরের আংটি (Diamond ring) এসেছিল কলকাতার (Kolkata) পোস্তা রাজবাড়িতে। ২০০২ সালে রাজবাড়ীর বর্তমান প্রজন্মের এক সদস্য প্রণব রায় কৌতূহলবশত হিরের আংটির দাম জানার চেষ্টা করেন। সেই মত ডেকে পাঠানো এক হিরে ব্যবসায়ীকে। পর্যবেক্ষণ করার পর সেই সময় প্রায় আড়াই কোটি টাকা দাম জানানো হয় ব্যবসায়ীর তরফে। অভিযোগ, মূল্যবান হিরের আংটি সামনে পেয়ে লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ভয় দেখিয়ে আংটি লুঠ করে নিয়ে পালান ইন্দ্রজিৎ তফাদার এবং তাঁর এক সঙ্গী। মাথায় হাত পড়ে প্রণব রায়ের।
এরপরই রাজবাড়ির তরফে প্রণব রায় পোস্তা থানায় অভিযোগ জানান। জোরকদমে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরের দিন দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড থেকে ইন্দ্রজিৎ তফাদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করে বাড়ির সুইচ বোর্ডের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় হিরের আংটি। উদ্ধার হওয়া আংটি যে রাজবাড়ী থেকে লুঠ হওয়া হিরের আংটি তা প্রণব রায় সনাক্তও করেন। পাশাপাশি তদন্তকারীরা জানতে পারেন ওই দিন যে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল তা ছিল আদপে খেলনা বন্দুক। তবে তখনও জল গড়ায়নি আদালতে।
২০০২ সাল থেকে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন বিচার চলার পর ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল ব্যাঙ্কশাল আদালতের ৬ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎ তফাদারকে তথ্য প্রমাণের অভাবে নির্দোষ ঘোষণা করেন। খালাস পেয়েই ক্ষান্ত থাকেননি ইন্দ্রজিৎ। হিরের আংটি নিজের বলে দাবি করে আদালতে আবেদন করেন। আইন অনুযায়ী রাজ বাড়ির সদস্য প্রণব রায়কে ডেকে পাঠানো হয়।
কিছুদিন পরে প্রণব রায় কলকাতা নগর দায়রা আদালতে মুখ্য বিচারকের এজলাসে ফের আগের ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুরোনো রায় খারিজ করে নতুন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয় আদালত। পাল্টা সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে ইন্দ্রজিৎ তফাদার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেখানেও অর্ডার বিপক্ষে যায় ইন্দ্রজিতের। বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করার রায় বহাল থাকে। ব্যাঙ্কশাল আদালতে ৬ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ফের শুরু হয় মামলা। ়নিজেদের আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা শুরু করেন প্রণব রায়। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বিচার প্রক্রিয়া চলার পর আজ সেই ইন্দ্রজিৎ তফাদারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের এবং ৫ হাজার জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। অনাদায়ে আরও ৬ মাস স্বশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে।