কলকাতা : শহরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি। এক দিনের নয়, কয়েক বছর ধরে হাসপাতালে চলছিল সেই দুর্নীতি। সেই কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হয় TV9 বাংলায়। আর তারপরই তদন্ত কমিটি গঠন হল আরজি করে (RG Kar Hospital)। অস্থিবিভাগের বিরুদ্ধে উঠেছে, সেই কয়েক কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ। বুধবার সেই অভিযোগের তদন্তের জন্যই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আর জি করে অস্থি বিভাগে হাঁটু প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সেই কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হল আজ। সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিকাশ ঘোষের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যেরা হলেন, রঞ্জন রায় (ইউরোলজি বিভাগ), বুলবুল মুখোপাধ্যায় (ফিজিওলজি বিভাগ), অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় (প্যাথোলজি বিভাগ), দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ) এবং ডেপুটি সুপার ত্রিদিপ মুস্তাফি।
এই কেলেঙ্কারিতে সরাসরি হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ। এই সব কেলেঙ্কারির কথা হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার সুপ্রিয় চৌধুরী জানতেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, অস্থি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সন্দীপ রায় ও অধ্যাপক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কথায়, ‘আর জি করের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে কেলেঙ্কারি, তদন্ত হলে সবার মুখোশ খুলে যাবে’।
জানা গিয়েছে, সাধারণত হাসপাতাল কোন সংস্থা থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম বা ওষুধ কিনবে, তা ঠিক করে দেয় স্বাস্থ্য ভবন। আরজি করের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে সেই সব আরজি করে সংস্থা থেকে সরঞ্জাম না কিনে কেনা হচ্ছে অন্য সংস্থা থেকে। সরকার বহুজাতিক সংস্থার নাম ঠিক করে দিলেও সেখান থেকে কেনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আর তার জন্য গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি টাকা।
তথ্য বলছে, সরকার নির্ধারিত সংস্থায় যে সরঞ্জামের দাম ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, সেই সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা বা ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়ে। আবার অন্য একটি সরঞ্জামের দাম সরকার নির্ধারিত সংস্থায় ৫০ হাজার ৩৪২ টাকা। কিন্ত কেনা হচ্ছে অন্য দুটি সংস্থা থেকে, যেখানে দাম ৭৪ হাজার ১৮২ টাকা বা ৬২ হাজার ৬৬৮ টাকা। প্রত্যেক মাসে ২০ থেকে ২৫ টি হাঁটু প্রতিস্থাপন হলে সরঞ্জামের দাম পড়ছে অনেকটাই বেশি। প্রয়োজনের থেকে কয়েক কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
কিছুদিন আগেই আরজি করের স্টেন্ট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসে। সেই কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস করে টিভি নাইন বাংলা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সময় মতো ব্যবহার না হওয়ায় হাসপাতালের ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে ২২১টি স্টেন্ট। ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে স্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও নতুন করে স্টেন্টের বরাত দেওয়া হয়েছিল। যার প্রত্যেকটির দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা। এবার ফের সামনে এল আরও এক কেলেঙ্কারি।