কলকাতা: বহু দিন পর স্কুল খুলেছে। খুশি পড়ুয়ারা। খুশি শিক্ষকরাও। কিন্তু কোভিড-বিধির গেরোয় শিক্ষকরা মহাসঙ্কটে। অনেক তাড়াতাড়ি স্কুলে ঢুকতে হচ্ছে।
দূরত্ববিধি মানতে গিয়ে এক ক্লাসকে দু’টি বা তিনটি ব্যাচে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাত্, আগে দুটো সেকশন থাকলে, এখন অন্তত চারটে সেকশন! কিন্তু শিক্ষক-সংখ্যা একই। ফলে বারবার একই ক্লাস নিতে হচ্ছে। সঙ্গে আবার পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির অনলাইন ক্লাস। এর সঙ্গে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির তালিকা তৈরি, মিড ডে মিল দেওয়া, তার হিসেব রাখা। শনিবারও গোটা দিন ধরে ক্লাস। এতদিন পর স্কুল খুলেছে, ইচ্ছেশক্তির জোরেই চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। কিন্তু কত দিন?
সঙ্কটে শিক্ষকরা
♦ কোভিড বিধির জন্য ২৫ পড়ুয়া পিছু একটি ব্যাচ
♦ বেশিরভাগ স্কুলে প্রতি ক্লাসে ন্যূনতম ২টি ব্যাচ
♦ পড়ুয়া সংখ্যা বেশি হলে কোনও কোনও স্কুলে ৩টি ব্যাচ
♦ ফলে একই বিষয় অন্তত দ্বিগুণ সময় পড়াতে হচ্ছে
♦ চলছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির অনলাইন ক্লাসও
♦ অনলাইনে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক, খাতা দেখার কাজ
♦ অনলাইন-অফলাইন-অনলাইন পড়িয়ে নাস্তানাবুদ শিক্ষকরা
♦ সকাল ৯টার মধ্যে স্কুল ঢুকতে হচ্ছে, বেরোতে বেরোতে ৫টা
♦ সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ৩টে নবম ও একাদশের ক্লাস
♦ সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ৪টে দশম ও দ্বাদশের ক্লাস
♦ সকাল ১১টার মধ্যে পড়ুয়াদের উপস্থিতির তালিকা পাঠাতে হচ্ছে
♦ মিড ডে মিল বিতরণ, তার হিসেব রাখা
♦ শনিবারও গোটা দিন ধরে ক্লাস, একটানা চালিয়ে যাওয়া কী ভাবে সম্ভব?
শুধু জেলার শিক্ষক নয়, সমস্যার কথা বলছেন কলকাতার শিক্ষকরাও। এক শিক্ষকের কথায়, “আমাদের বাড়ি স্কুল থেকে অনেকটাই দূরে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ওত সকালে বেরিয়ে স্কুলে পৌঁছানো। ফের দেরিতে বেরনো। স্কুলেও একগুচ্ছ নিয়ম মানতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম তো ব্যাপারটা হচ্ছে, পরে হবে তো?”
চন্দন মাইতি নামে এক প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমরা যখন অনলাইনে ক্লাস নিতাম, দেখা যেত ৫-১০ শতাংশ পড়ুয়া ক্লাসে যোগ দিত। কারোর মোবাইল থাকত না, যাদের মোবাইল থাকত, তাদের নেট থাকত না। এই ভাবে এখন গ্রামের দিকের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়া কার্যত সমস্যারই।”
আরও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। একাধিক স্কুলের অ্যাটেনডেন্স রিপোর্ট ১১টার মধ্যে জমা পড়ছে না বলে সূত্রের খবর। ডিআই মারফত প্রধান শিক্ষকদের কড়া বার্তা দিল বিকাশ ভবন। ১১ টার মধ্যেই জমা দিতে হবে অ্যাটেনডেন্স রিপোর্ট। মেনে চলতে হবে পর্ষদ ও সংসদ নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়সীমা। কড়া নির্দেশ শিক্ষা দফতরের।
কোভিডের লড়াইয়ে বিধি মানার চ্যালেঞ্জ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও। প্রথম দিন প্রায় ৭২ শতাংশ হাজিরা নিয়ে সচল নবম থেকে দ্বাদশ। যদিও শিফট ভাগ করে অর্ধেক পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চললেও কোভিড বিধি পালনে কার্যত হিমশিম খেতে হয়েছে বহু স্কুল কিংবা কলেজে।
করোনার বিষয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সতর্ক করার দায়িত্বও স্কুলকেই দিয়েছে রাজ্য। করোনা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ‘ডু অ্যান্ড ডোন্টস’-এরও একটি তালিকা রয়েছে বিকাশ ভবনের স্কুল রিওপেন বুকলেটে। সেখানে বলা হয়েছে, জ্বর হলে কোনও অভিভাবক যেন পড়ুয়াকে স্কুলে না পাঠান।
আরও পড়ুন: ‘প্রার্থীই তো দিতে পারেনি তৃণমূল, কার হয়ে প্রচার করবেন?’ বাবুলের ত্রিপুরা সফরকে খোঁচা দিলীপের