কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শালকু’ আতঙ্ক। ‘শালকু ট্রিটমেন্ট টু SFI’- অরবিন্দ ভবনের দেওয়ালে লেখা হুমকি স্লোগানেই জোরদার চর্চা ক্যাম্পাসে। অতিবাম সংগঠন RSF-কে দায়ী করছে এসএফআই। এদিকে ছাব্বিশে বিধানসভা ভোটের আগেই কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে যাদবপুরেও। তার আগে এই পোস্টার কার্যত আগুনে ঘি ঢালার সামিল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে লালগড়ে খুন হয়েছিলেন সিপিএম কর্মী শালকু সোরেন। অভিযোগ উঠেছিল মাওবাদীদের দিকে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েই খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। খুনের পর পার্টি অফিসের সমানে পাঁচদিন দেহও ফেলে রাখা হয়। দাহ করতে দেওয়া হয়নি পরিবারকে। কাছে যেতে দেওয়া হয়নি শালকুর মা ছিতামণি সোরেনকেও। সিপিএম জমানার শেষভাগে যা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। এখন তরুণ সিপিএম কর্মীদের দাবি, তাঁদের কাজে, তাঁদের সঠিক দাবিতে ভয় পেয়েই এসব করছে অতিবামেরা।
জোর তরজা ক্যাম্পাসে
এসএফআই নেত্রী কৌশিকী ভট্টাচার্য বলছেন, “রেভল্যুশনারি স্টুডেন্ট ফ্রন্টের কাজ। যাঁরা এককালে তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের এসএফআইয়ের বহু কর্মীকে মেরেছে। মাওবাদের নামে আরকাজকতা চালিয়েছে। তাঁরাই এ কাজ করেছে।” কৌশিকীর দাবি, তাঁদের এক কর্মীকে মঙ্গলবার বেধড়ক মারধরও করা হয়েছে। সংগঠনের এক সদস্যকে নিয়ে তাঁর ক্ষতচিহ্নও ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন। তবে শুধু এই ছেলেই নয়, আরও অনেকেরই গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কৌশিকীর কথায়, “প্রথমবর্ষের অনেক পড়ুয়াকে মারা হয়েছে। চারদিকে ঘিরে ধরে অত্যাচার চলেছে। শুধু আরএসএফ নয়, WTI, FAS, DSF যাঁরা স্বপ্ন খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাঁরা সবাই মিলে এই কাজ করেছে। আমাদের ধারণা তৃণমূলের সঙ্গেও এই কাজের জন্য ওরা আঁতাত করেছিল।”
যদিও আরএসএফ দিচ্ছে অন্য যুক্তি। সংগঠনের নেতা ইন্দ্রানুজ বলছেন, “এটা পুরোটাই অপ্রচার। আমরা ওটা লিখিনি। কারণ শালকু সোরেনের সঙ্গে যা হয়েছিল আমরা তার তীব্র নিন্দা করেছি। এখন আমরা ক্যাম্পাসে যে দেওয়াল লিখন করেছি তাতে আমাদের সংগঠনের নাম রয়েছে। তাতে সাফ বলা হয়েছে ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের ছাত্রছাত্রীদের লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হলে তাঁদের পরিণতি পার্থ বিশ্বাসের মতো হতে পারে। কারণ ক্যাম্পাস গতকাল যখন আইসিসি ইলেকশন নিয়ে মিটিং হয় তখন এসএফআই থেকে তিনজন ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু একজন ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এসএফআই ঝামেলা করে। যখন রেজলিউশন বের হয় তখন সমস্ত সংগঠনের কর্মীদের ভিতরে আটকে দিয়ে বাইরে তালা দেয়। বাইরে থেকে হুমকি দিতে থাকে। বলতে থাকে তোদের লাশ ফেলে দেব। এসএফআই শেষবার ইলেকশনে জেতার পর থেকে ভাবছে এখানে ওদের রাজ চলছে।”
বিতর্কে যাদবপুরের নাম জড়াতেই উঠে এসেছে মাওবাদ দর্শন। যদিও ইন্দ্রানুজ বলছেন, “মাওবাদ দর্শন যে কোনও কেউ বিশ্বাস করতে পারে। প্রচার করতে পারে। এটা সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালেই বলেছে। একইসঙ্গে বলেছে মাওবাদ দর্শন বিশ্বাসী হওয়াই নয়, সংগঠনের কর্মী হওয়ার পরেও যতক্ষণ না সে সশস্ত্র আন্দোলন করছে বা তাতে আর্থিক সাহায্য করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে UAPA-তে বন্দী করা যায় না। আমরা মনে করি মাওবাদের মতাদর্শ সঠিক। যে সংসদীয় রাজনীতিতে SFI-এর মতো দলগুলি চলে সেটা আসে ভাওতাবাজী।” যদিও এসএফআই নেত্রী কৌশিকী বলছেন, “ওরা যতই থ্রেট দিক আমরা শালকু সোরেনদের চেতনাতেই বিশ্বাসী। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামী ৫ তারিখ ICC ইলেকশনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে। এই দাবিতে আমাদের অবস্থান চলছিল।” কৌশিকীর দাবি, “এই সমস্ত সংগঠনই ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পিছাতে চাইছে। তাঁর কথায়, মলেস্টারদের সেফ গার্ড করতেই তাঁরা এসব করছে। এসএফআইয়ের উপর আক্রমণ নামছে।” যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলছেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কোনও অভিযোগই এখনও পর্যন্ত জমা পড়েনি। তাঁর কিছু জানা নেই।