কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর বাজি ব্যবসায়ীদের মনেও অনিশ্চয়তার তৈরি হয়েছিল। তবে আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাজি ফাটানো পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানো যাবে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পর খুশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গীর বাজি ব্যবসায়ীরা। চলছে মিষ্টিমুখের পালা।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাঁরা যে টাকা দিয়ে পরিবেশবান্ধব বাজি কিনেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁদের ব্যবসাটা বেঁচে গেল। সেই আনন্দেই নুঙ্গী বাজি বাজারে আজ চলছে মিষ্টি খাওয়ানোর পর্ব। একইসঙ্গে পথচলতি সাধারণ মানুষদের কাছেও তাঁদের অনুরোধ, শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব বাজিই যেন তাঁরা ফাটান। বাজি ব্যবয়াসীদের অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, নুঙ্গী বাজি বাজারে পরিবেশবান্ধব বাজি ছাড়া আর অন্য কোনও বাজি বিক্রি করা হবে না।
নুঙ্গী বাজি বাজারের এক ব্যবসায়ী পীয়ূশ মৈত্র জানিয়েছেন, আমরা এতদিন ধরে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম, বাজিগুলো নিয়ে এবার হয়ত জলের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম, আমরা ভেবেছিলাম, আর বাজি বিক্রি করতে পারব না। তাহলে সব শেষ হয়ে যেত। এমনিতেই আমরা কিছু না কিছু বন্ধক দিয়ে চালাচ্ছি। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমরা সত্যিই খুব খুশি। সুপ্রিম কোর্টকে আমরা ভগবানের চোখে দেখছি। পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, এমন বাজি তৈরির দিকে আমরা আরও জোর দেব।” তাঁদের আশা, আজকের মতো আগামী দিনেও আইন এবং রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।
আতসবাজি ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা সুখদেব নস্কর জানিয়েছেন, ছোট ব্যবসায়ী যাঁরা আছেন, তাঁরা এখন পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করেছেন। বেরিয়ামকে বাদ দিয়ে বাজি তৈরি করায় জোর দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আতসবাজি নিয়ে হাইকোর্টের রায় আজ খারিজ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের দাবি, পরিবেশ বান্ধব বাজি বিক্রি করা হোক। পরিবেশ বান্ধব বাজিই বিক্রি হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। তবে সব বাজি নিষিদ্ধ, এমনটা হতে পারে না বলেই মত শীর্ষ আদালতের। কালী পুজো ও দীপাবলীতে কোনও ধরনের বাজিই ফাটানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি। বিচারপতি এনএম খানউইলকর ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগীর বেঞ্চে আজ ছিল সেই মামলার শুনানি।
সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, পরিবেশের পরিস্থিনি অনুকূল থাকলে পরিবেশ বান্ধব বাজির ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না। সেই নির্দেশ সব রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও সেই নিয়ম মানতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজি নিয়ে হাইকোর্টের আলাদা রায়ে অখুশি সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বলে দিয়েছে, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্ট আগেই বাজি সম্পূর্ণ বন্ধ করার নির্দেশের বিরোধিতা করেছিল, আজ আবার সে কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : Firecrackers in Diwali: ‘সব বাজি নিষিদ্ধ নয়’, হাইকোর্টের রায় খারিজ হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে