Snake bites pregnant woman: অন্তঃসত্ত্বার শরীরে কালাচ সাপের কামড়, বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস… যা করলেন বাঁকুড়ার চিকিৎসকেরা

Snake bites pregnant woman: উপসর্গ দেখে দ্রুত বুঝে যান চিকিৎসকেরা, কী করতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াতেই বেঁচে যান মহিলা।

Snake bites pregnant woman: অন্তঃসত্ত্বার শরীরে কালাচ সাপের কামড়, বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস... যা করলেন বাঁকুড়ার চিকিৎসকেরা
অন্তঃসত্ত্বার শরীরে সাপের কামড়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 07, 2022 | 9:31 PM

বাঁকুড়া : সাপের কামড় বুঝতেই পারেননি মহিলা। শুধু বুঝেছিলেন, কিছু একটা কামড় বসিয়েছে। গর্ভে রয়েছে সন্তান, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি। দ্রুত চলে যান হাসপাতালে। চিকিৎসকদের সঠিক সিদ্ধান্তেই প্রাণ ফিরে চেয়েছেন তিনি।

গত ৫ জুন ব্রাহ্মণডিহার বাসিন্দা রিঙ্কু কুম্ভকার রাতে এসে পৌঁছন হাসপাতালে। বড়জোড়া হাসপাতালে এসে তিনি জানান, অজানা প্রাণী কামড় দিয়েছে তাঁর শরীরে। কিন্তু উপসর্গ দেখে মুহূর্তেই চিকিৎসকেরা বুঝে যান, এটা সাপের কামড়। দু চোখের পাতা পড়ে আসছিল তাঁর, ইংরেজিতে যাকে বলে বাইল্যাটারাল টোসিস। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন আসলে কালাচ সাপের কামড় খেয়েছেন ওই গৃহবধূ। এভিএস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন তাঁরা।

কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়ার অপেক্ষা করতে করতে তাঁরা লক্ষ্য করেন, রিঙ্কু দেবীর ততক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। কালাচ সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে এ ভাবেই শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন রোগী। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তৎক্ষণাৎ বড়জোড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নবেন্দু রায় এবং ডাঃ সুদীপ্ত সরদার রোগীর শ্বাসনালীর মধ্যে নল ঢুকিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ইনটিউবেশন। আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের কাজ শুরু করে দেন তাঁরা। তারপর ওই চিকিৎসকেরাই যোগাযোগ করেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে।

পশ্চিমবঙ্গের স্নেক বাইট রিসোর্স পার্সন ডাঃ দয়াল বন্ধু মজুমদারের তৈরি স্নেক বাইট ইন্টারেস্ট গ্রুপে ভারতের ১৩ টি রাজ্যের চিকিৎসক, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকও আছেন। ঘটনার কথা জানতে পেরে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ওই গ্রুপে। এর ফলে বড়জোড়া হাসপাতালের সঙ্গে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের যোগাযোগ তৈরি হয়।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শ্যামল কুন্ডু ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। ওদিকে ততক্ষণে আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে রিঙ্কু কুম্ভকারের ফুসফুসে অক্সিজেন ভরে দিতে থাকেন ডাঃ সুদীপ্ত সরদার ও ডাঃ নবেন্দু রায়। কী ভাবে এই ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তা শিখিয়ে দেওয়া হয় রিঙ্কু দেবীর ভাসুর নিমাই কুম্ভকারকে। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে আম্বু বাগের সাহায্যে ভেন্টিলেশন দিতে দিতে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তাঁর ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়।

হাসপাতালে পৌঁছনোর কিছু সময় পরেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরদিন অর্থাৎ ৬ জুন রোগীকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করে দেওয়া হয়। আজ, মঙ্গলবার রিঙ্কুকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য বলেন, ‘অসাধারণ দক্ষতায় কেবলমাত্র লক্ষণ দেখে কালাচ সাপের কামড় নির্ণয় করে এভিএস দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করে রোগীকে বাঁচিয়ে তুলেছেন বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। এটা এককথায় অনবদ্য।’ তবে তাঁর দাবি, সব হাসপাতালে নবেন্দুর মত ফুসফুসের রাস্তায় নল পরানোর কাজে পারদর্শী চিকিৎসক পাওয়া মুশকিল এবং এ ভাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ো যাওয়ার পথে ভেন্টিলেশন দেওয়ার কাজও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি জানিয়েছেন, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর এ ক্ষেত্রে খুব সহজেই যে কোনও ভেন্টিলেটরের মত কাজ করতে পারে আপৎকালীন অবস্থায়। তাই প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি এই ব্যবস্থা থাকে, তাহলে সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ধরনের শ্বাসকষ্টের অসুবিধায় ভুগতে থাকা রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই নিয়ে একটি প্রস্তাবনা মঙ্গলবার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে দেওয়া হয়েছে।