তন্ময় প্রামাণিক: সাফল্যের থেকেও হয়তো বড় ঘটনা! সাক্ষী এসএসকেএম হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারে দু পা বাদ যাওয়া মহিলা হেঁটে বাড়ি ফিরছেন!!!
পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যিনি করানো আক্রান্ত হওয়ার কারণে দুটি পা হারিয়েছেন। তিনি এই শহরেরই এক বাসিন্দা। দমদমের বাসিন্দা ৪২ বছরের রিমা নন্দী দত্ত। দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসার পর এসএসকেএম হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ বিশেষ ধরনের আধুনিক কৃত্রিম অঙ্গের সাহায্যে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরালেন ওই মহিলাকে। হাঁটুর নিচ থেকে দুটি পা কেটে বাদ যাওয়ার পর এখন তিনি হাঁটছেন।
কেউ বলছেন অসাধ্য সাধন। কেউ বলছেন মিরাক্যাল । বিশ্বের মানচিত্রে এবার সেই অসাধ্য সাধনের অংশীদার এসএসকেএম হাসপাতাল তথা এই শহর বা এই রাজ্য বা এই দেশ।
কী ঘটেছিল?
করোনাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন রিমা নন্দী দত্ত। করোনার কারণেই তাঁর দুপায়ের আটারি মধ্যে ব্লকেজ তৈরি হয়। ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপায়ে গ্যাংগ্রিন শুরু হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় থ্রম্বোসিস ইন আর্টারিজ অফ লেগস। এসএসকেএম হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে এই দুটি পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় দুটি পা। একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয় এই দুই পায়ের সংক্রমণের কারণে। একটি পা হাঁটুর নিচে সাত সেন্টিমিটারের পরের অংশ এবং অন্যটি হাঁটুর নিচে ১০ সেন্টিমিটারের পরের অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছিল।
মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত রিমাকে চিকিৎসকেরা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে আসেন। কৃত্রিম পা লাগানোর প্রস্তুতি শুরু হয় ।তৈরি করা হয় “স্টাম্প”। স্বাস্থ্য ভবনের কাছে তদবির শুরু করে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ। মহিলার দেহের গঠন, শরীরের ওজন, বাদ যাওয়া দুই পায়ের বিভিন্ন অংশের পরিমাপ করে যে ধরনের এনডোস্কেলিটাল প্রস্থেসিস লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা এই দেশে পাওয়া যাচ্ছিল না। জার্মানি থেকে তা আনার জন্য সাড়ে চার লাখ টাকা স্বাস্থ্য ভবনকে দিয়ে অনুমোদন করানো হয় ।এরপর জার্মানি থেকে এসে পৌঁছায় সেই অত্যাধুনিক প্রস্থেসিস। এই কৃত্রিম পা বাদ যাওয়া পা দুটির নিচের অংশে যুক্ত করে ঠিকভাবে হাঁটানোটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ শরীরের সঙ্গে যুক্ত করাটাই চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরে সেই কাজ করে অবশেষে সফল পিএমআর বিভাগ।
বিভাগীয় প্রধান রাজেশ প্রামাণিক বলেন, “বিশ্বের মধ্যে এটিই প্রথম নথিভুক্ত ঘটনা যে করোনার জেরে দুটি পা বাদ গিয়েছে। আর একদম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সেই মহিলাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হলে তাঁকে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। সেটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রায় নয় মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন এখানে। স্বাস্থ্য ভবন ও সরকারকে ধন্যবাদ। আমরা যা যা চেয়েছি তাই তাই পেয়েছি। সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ করে জার্মানি থেকে বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক এন্ডস্কেলিটাল প্রস্থেসিস আনানো হয়। এখন তিনি হাঁটতে পারেন অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। একটা দীর্ঘ লড়াই। আমরা সরকারি হাসপাতাল সফল। এখন তিনি ঘরের কাজ রান্নাবান্না সবই করতে পারবেন। সামলাতে পারবেন নিচের সাত বছরের সন্তানকেও। একমুখ হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এর থেকে বড় পাওনা আর কি আছে?”
আর রিমা? আনন্দে কথা হারিয়েছেন।