কলকাতা: রাজাবাগান, মেটিয়াবুরুজ, মল্লিকঘাট, পোস্তার মত বন্দর এলাকাগুলিতে ঘন জনবসতি এখন। প্রচুর ছোট ছোট বাড়ি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মানুষের বাস। তার ধার ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। ফি বছর গঙ্গায় প্লাবন এলে যেমন এই মানুষগুলোর বিপদ। একই ভাবে বহু মানুষের বসবাসের কারণে গঙ্গা দূষণও ক্রমবর্ধমান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, গঙ্গার দূষণ রুখতে। কিন্তু সেই দূষণ রুখতে গিয়ে কলোনিগুলি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকটা নজর রাখারও নির্দেশ দিলেন তিনি। আরও একবার উঠে এল ‘বাংলার মেয়ে’র মানবিক মুখ।
সোমবার নবান্নে ইয়াস পরবর্তী পরিস্থিতির পর্যালোচনা বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা তো ছিলেনই, একইসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পরিবহন মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। বৈঠকেই মমতা নির্দেশ দেন, এবার গঙ্গা সংস্কারের কাজ করতে হবে পুরোদমে। প্রয়োজন পড়লে পুরনো এসটিপি বাতিল করতে হবে। খরচ এবং মান দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে কাজ হোক, চান মুখ্যমন্ত্রী। সে প্রসঙ্গেই ফিরহাদের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এদিন মমতা বলেন, “কলোনি গঙ্গার পাশে ফেলে দিলে তো ঠিক নয়। তা হলে তো গঙ্গা বন্ধ হয়ে যাবে। কলোনিগুলোকে দরকার হলে কোথাও রিশিফট করতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব শুনেই ফিরহাদ বলেন, “না না কলোনিগুলি বিরাট হয়ে গিয়েছে। সেগুলি রিশিফট করা যাবে না। ওখানেই জায়গা খুঁজে বার করে করতে হবে। বায়ো ট্রিটমেন্ট দিয়ে কাজ করতে হবে। নতুন জিনিস অ্যাডপ্ট করতে হবে।” সঙ্গে সঙ্গে মমতা সরকারি আধিকারিকদের পরামর্শ দেন, “কলোনির মধ্যে থেকেই কী ভাবে কায়দা করে জায়গা বের করা যায় দেখুন। দরকার হলে ক্যানেলগুলোকে উঁচু করতে হবে, যাতে কলোনিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
আরও পড়ুন: ‘জলের নামে জলে চলে যাচ্ছে টাকা, কাজ কোথায়?’ নবান্নে ধমক মমতার
কলকাতা বন্দর এলাকার বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে গঙ্গার ধারে জনবসতি দীর্ঘদিনের। উত্তর বন্দর ও দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকায় এ দৃশ্য সবথেকে বেশি নজরে পড়ে। গঙ্গার পার ভাঙতে ভাঙতে কোথায় যে গিয়ে পৌঁছেছে তা বলা মুশকিল। কিন্ত এইসব এলাকায়, যে পরিমাণ মানুষের বাস তাঁদের অন্যত্র কোনও ভাবেই সরানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়ী, দোকান, ঘর রীতিমত থিক থিকে ভিড়ের এলাকা এসব জায়গা। যেহেতু ফিরহাদ হাকিম বন্দর এলাকারই বিধায়ক, তিনিও খুব ভাল করেই জানেন এখানকার বসতি এলাকার চিত্রটা। ফলে কলোনিগুলিকে রেখেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
আরও পড়ুন: বড় সিদ্ধান্ত! মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক বাতিল, নবান্নে ঘোষণা মমতার
এদিন ফিরহাদও বলেন, বছরের পর বছর নতুন নতুন জায়গায় কলোনি হয়েছে। সেগুলি সব টেনে নিয়ে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে গঙ্গা কলেবরে কমেছে। অন্যদিকে কাজ করতে গিয়ে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গার অভাবে নতুন করে এসটিপি করা যাচ্ছে না। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, নতুন তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, কলোনিগুলিকে অক্ষত রেখে বিকল্প পথে কাজ শেষ করার।