Green Taxi: গাড়ির মধ্যে থাকা মদের বোতল আর বন্ধুদের টিটকারি! গাছ গাড়ি তৈরির গল্প শোনালেন ধনঞ্জয়

Taxi: ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এলেই জুটত কটাক্ষ। বন্ধুরা তাঁর এই কাজ দেখে তামাশা করতেন, হাসিঠাট্টাও বাদ যেত না। বন্ধুরা বলতেন, আর কোথায় গাছ লাগাবি?

Green Taxi: গাড়ির মধ্যে থাকা মদের বোতল আর বন্ধুদের টিটকারি! গাছ গাড়ি তৈরির গল্প শোনালেন ধনঞ্জয়
সবুজে মোড়া ট্যাক্সি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 05, 2022 | 10:29 PM

কলকাতা: কলকাতার বুকে ট্যাক্সি চালান ধনঞ্জয় চক্রবর্তী। গাছ লাগিয়ে অন্য মাত্রা দিয়েছেন নিজের ট্যাক্সিকে। শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবস নয়, পরিবেশপ্রেমী ধনঞ্জয় ট্যাক্সির মাধ্যমে সারা বছরই সচেতনার বার্তা দেন শহরবাসীকে। গাছের সৌন্দর্য কতটা, সেটা তাঁর ট্যাক্সি দেখলেই বোঝা যায়। যাত্রী থেকে পথচারী- সকলেই তাঁর ট্যাক্সি দেখে উচ্ছ্বসিত। যদিও সরকারি স্বীকৃতি মেলে না। সেই ঘটনা ধনঞ্জয়কে কষ্ট দিলেও নিজের কাজে অটল তিনি।  ট্যাক্সিকে সবুজ বানানোর ভাবনা কী করে মাথায় এল তাঁর? বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন টিভি৯ বাংলাকে।

ট্যাক্সি চালিয়েই সংসার চালাতেন ধনঞ্জয়। একদিন তিনি দেখেন গাড়ির ভিতরে পড়ে রয়েছে একটি মদের বোতল। সেই বোতলে গাছ লাগাবেন বলে ঠিক করলেন। তারপর গাড়ির ভিতর কয়েকটা গাছ লাগান ছোট ছোট পাত্রে। কিন্তু ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এলেই জুটত কটাক্ষ। বন্ধুরা তাঁর এই কাজ দেখে তামাশা করতেন, হাসিঠাট্টাও বাদ যেত না। বন্ধুরা বলতেন, আর কোথায় গাছ লাগাবি? শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে তামাশা তো ছিলই। বন্ধুদের কেউ কেউ বলতেন, তোর মাথাটা ফাঁকা আছে, ওখানে এ বার গাছ লাগা। ওই তামাশা থেকেই তাঁর মাথায় আসে হলুদ ট্যাক্সির মাথায় গাছ লাগানো যেতে পারে। তার পর গাড়ির মাথায় আস্তরণ বিছিয়ে লাগানো হলো ঘাস ছোট ছোট ফুলের গাছ। সেই থেকে ট্যাক্সির নাম হয়ে গেল গাছ গাড়ি।

২০১৫ সালে ধনঞ্জয় ঠিক করেন দু’খানা ট্যাক্সিকে গাছ দিয়ে সাজিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন যাবেন। রাস্ট্রপতির কাছে পরিবেশ বাঁচানোর আর্জি নিয়ে। কিন্তু ট্যাক্সি কেনার সামর্থ ছিল না। তখন শিল্পী বন্ধু প্রদীপ মৈত্র তাঁর নিজের একটি অ্যাম্বাসাডর দিয়ে দেন ধনঞ্জয়কে। তত দিনে অবশ্য হলুদ ট্যাক্সিটি মোটর ভেহিকেলসের নিয়ম অনুযায়ী বাতিল হয়ে গিয়েছে। তবুও দমে যাননি ধনঞ্জয়। বন্ধুর গাড়িকেই সাজিয়ে তোলেন গাছ দিয়ে। শহরের প্রথম সারির কার্টুনিস্ট ও চিত্রশিল্পীরা গাড়ির গায়ে এঁকে দেন শিল্পকলা। সেই আঁকাতেও রয়েছে পরিবেশ ভাবনা।

অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি ধনঞ্জয়। সেই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাঁকে। কারখানার কাজ জুটলেও লকআউট হওয়ায় কাজ হারান। তার পর শেখেন গাড়ি চালানো। ২০২০ সালে স্ত্রী ও মাকে হারান। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিনমাস আগে বাবাকেও হারিয়েছেন। প্রিয়জনদের হারিয়ে ধনঞ্জয়ের এক মাত্র সম্বল গাছগাড়ি। সেই গাড়িই তাঁর বাঁচার রসদ। দক্ষিণ কলকাতায় ছোট্ট এক চিলতে ঘরে থাকেন। সেখানেও শোওয়ার ঘরের মেঝেয় রয়েছে ১২টা গাছ। দেশ বিদেশে স্বীকৃতি, অমিতাভ বচন প্রশংসা জুটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সরকার এই পরিবেশ প্রেমিককে কোনও স্বীকৃতি দেয়নি। তিনি বলেন, “মোটর ভেহিকেলসে গেলে গাড়ি থেকে সব গাছ নামিয়ে যেতে হয়। না হলে সার্টিফিকেট দেয় না। ভালো কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাকে কার্নিভালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এরা পরিবেশ প্রেম হয়তো বুঝতেই পারেন না।”