কলকাতা: ‘সন্তান তুল্য মনে করতেন আমাকে।’ বিধানসভায় প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় বললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বললেন, “সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের আত্মিক সম্পর্ক ছিল। মনে হচ্ছে পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালাম। রাজনীতির বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল।”
কালীপুজোর রাতেই সেই দুঃসংবাদ অত্যন্ত আকস্মিক ছিল গোটা রাজ্যের কাছে। বঙ্গরাজনীতিতে তো তা বটেই। চলে যান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেদিন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি তাঁর। শুধু একটি টুইট করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।'” বিধানসভায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সময়ে এর থেকে অনেকটা বেশি আত্মিক কথা বলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় পিতৃতুল্য ব্যক্তি ছিলেন। আমি যখন শৈশব থেকে কৈশরের পথে যাচ্ছি সেই সময় থেকেই তাঁকে চিনতাম। আগে বাবার হাত ধরে তাঁর কলকাতার বাড়িতে এসেছিলাম। পরবর্তীকালে নিজেও গিয়েছি। অত্যন্ত পরিপূর্ণ একজন মানুষ ছিলেন।”
শিশির অধিকারী বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে কখন কী করতে হবে, বঙ্গ রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্তটা সবথেকে ভালো নিতে পারতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ওঁর সঙ্গে আমার অসংখ্য স্মৃতি আছে।”
রোধী নেতা হিসাবে শুভেন্দু সম্পর্কে কেমন পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন ছিল তাঁর? শেষবার Tv9 বাংলায় ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে বিরোধী নেতা হিসাবে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে সুব্রতবাবু ফিরে গিয়েছিলেন অতীতে। তুলনা টেনেছেন জ্যোতি বসু ও সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের জমানার। সুব্রতবাবু হাসতে হাসতে বলেন, “আমাকে অনেক সময়ে চ্যাংদোলা করে বাইরে ফেলে দিয়েছেন। আবার পরে মুখ্যমন্ত্রী চা খাইয়ে বলেছেন, কেন প্রেসারের মানুষ এমন করেন। বিধানসভাকে কেমন হতে হয় ওঁদের দেখেই শেখা।”
বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী কেমন? সুব্রতবাবুর বলেছিলেন,”ওঁর যেটা নেই সেটা হচ্ছে… প্রেসকে বলার মতো কথাবার্তা, সেটা যেমন বলে থাকে, বলে থাকে। কিন্তু হাউসে এফেক্টিভলি তথ্য় দিয়ে আমাদের বিড়ম্বনায় ফেলতে পারবে, সেটা ওর কাছ থেকে পাই না। কিছু হলে আমরা মানলাম না, ওয়াক আউট!” হাসতে হাসতে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। তার পর যোগ করেন, “দিনে দশবার ওয়াক আউট করলে কী হবে! প্রতিবাদটা রাখতে হবে এবং দিনের শেষে হাউসে এস্টাব্লিশ করে যেতে হবে। তবে তো প্রেসের লোকেরা লিখে কিছু লিখে মানুষকে জানাতে পারবে। ওঁ দেখেছি, কিছু হলে ওয়াক আউট। ওয়াক আউট হলে তো আমরা সব পাশ করিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যাব। ওঁর বিরোধী নেতা হিসাবে যে প্রোজেকশন থাকা উচিত, আমার মনে হয় টাইম লাগবে।”
শুভেন্দু সম্পর্কে সুব্রতবাবুর পর্যালোচনা ছিল, “বিলো দ্য বেল্ট, ব্যক্তি আক্রমণ থেকে পিছু হঠতে হবে। শুধু আলোচনায় না গিয়ে ব্যক্তি আক্রমণ, এটা সিপিএমের মধ্যেও বেশি ছিল না। কিন্তু ওরা যখন বিরোধীর চেয়ারে বা শাসকের আসনে ছিল, এই ফিলোজফিটা মানত। এমনকি হাউসের সম্মানটা বাম ও কংগ্রেস বেশি জানত, যা এখনকার আমাদের মধ্যে নেই।”
কথাগুলো রয়ে গিয়েছে। মানুষটা নেই। ‘সন্তানসম’ শুভেন্দুর উদ্দেশে সম্ভবত এটাই ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শেষ পরামর্শ।