কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের সংবাদ শিরোনামে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন। সিঙ্গুর আন্দোলন ‘কোনও আন্দোলনই নয়’, নন্দীগ্রাম আন্দোলনই ‘আসল আন্দোলন’ বলে দাবি জানালেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার জাতীয় গ্রন্থাগারে ওবিসি মোর্চার এক অনুষ্ঠানে তিনি বামেদের সুরে সুর মিলিয়ে সিঙ্গুর আন্দোলনকে ‘শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন’ বলেও কটাক্ষ করলেন। যা পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য-রাজনীতি নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিল।
ঠিক কী বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী?
এদিন জাতীয় গ্রন্থাগারে ওবিসি মোর্চার সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “সিঙ্গুর আন্দোলন কোনও আন্দোলনই নয়, ওটা তো শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলনই আসল আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলন কৃষক হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন।”
এখানেই শেষ নয়, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব পরোক্ষে কাঁথির অধিকারী পরিবার এবং বিজেপি-কে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবানির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি পরিবার। তাঁরাই সেখানে উদ্ধার করেছিলেন, একদিকে জনসাধারণের কমিটির নামে মাওবাদী- ছত্রধর জনসাধারণের কমিটি। অন্যদিকে তৎকালীন শাসক-পুলিশ ও পার্টি ক্যাডার নিয়ে তৈরি হয়েছিল যৌথ বাহিনী। দুটো কমিটি ভেঙে সেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
অর্থাৎ এদিন শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে ‘আসল আন্দোলন’ তকমা দিয়ে যে কৃষকদের অধিকার রক্ষায় বিজেপি এবং অধিকারী পরিবারের আন্দোলনকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন তা বলা বাহুল্য। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অন্যতম সোপান হল, নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর আন্দোলন। আর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তৃণমূলের তরফে একেবারে পুরোভাগে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারী সহ কাঁথির অধিকারী পরিবার। অন্যদিকে, সিঙ্গুর আন্দোলনের পুরোধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের পরিধি একই হলেও এদিন বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সুচারুভাবে দুই আন্দোলনের প্রভেদ করে দিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
যদিও সিঙ্গুর আন্দোলন শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন বলে বামেরাও আগে অভিযোগ তুলেছিল। সিঙ্গুর আন্দোলনের পরই রাজ্য ছেড়েছিল টাটা গোষ্ঠী। বর্তমানে সিঙ্গুরের সেই পরিত্যক্ত জমিতে না কৃষি, না শিল্প- কোনটাই হয়নি। ফলে রাজ্যে শিল্প না হওয়ার জন্য সিঙ্গুর আন্দোলনকেই দায়ী করেন বিরোধীরা। যদিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সিঙ্গুর আন্দোলন ‘টাটাদের তাড়ানোর আন্দোলন নয়’। টাটা গোষ্ঠী রাজ্যে বিনিয়োগ করছে বলেও সম্প্রতি হুগলির জনসভায় গিয়ে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শুভেন্দুর এদিনের মন্তব্য ফের পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিঙ্গুর আন্দোলন ও শিল্প বিতর্ক উস্কে দিল।
যদিও নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন এবং সিঙ্গুর আন্দোলন নন্দীগ্রামের মতোই কৃষকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন বলে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। সিঙ্গুর আন্দোলন সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারী যে মন্তব্য করেছেন, সেটা ‘ভুয়ো’ বলেও দাবি জানিয়েছেন প্রবীণ নেতা।