কলকাতা: বিধ্বংসী আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছে ট্যাংরার বস্তি (Tangra Fire )। জতুগৃহে সর্বশান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। একদিকে আগুনে পুড়ছে বাড়ি, অন্যদিকে জীবনে বেজেছে বিয়ের সানাই। কিন্তু সামনে যখন অত বড় বিপদ দেখেন তখন নিজেকে আর সামলাতে পারেননি তিনি। কথা হচ্ছে ট্যাংরার ভোলা সাউকে নিয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আগুন নেভাতে। ফেটেছে মাথা। কিন্তু তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। ব্যান্ডেজ পরেই বিয়ে করতে যাবেন তিনি। ভোলার এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পাড়া প্রতিবেশীরাও। বুধবার বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন ট্যাংরার এই সাহসী যুবক।
কী হয়েছিল গতকাল? ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভোলা বলেন, “আমার ঘরের সামনে আগুন জ্বলছিল, তাই আমি কিছু না ভেবে আগে আগুন নেভাতে যাই। উপরে লোক ছিল না। তখন দাদারা দমকলের পাইপ ধরে ছিল। ওরা দশজন ধরাধরি করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল। তখন ওই পাইপটা আমার মাথায় এসে পড়ে। আমার মাথা ফেটে যায়”। বিয়ে প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করাতে ভোলা বলেন, “এই সময় এরকমটা হওয়ায় একটু তো মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা তো এড়ানো যায় না। তবে বিয়ে তো হয়ে যাবে। কিন্তু নিজের বাড়ি বাঁচাতে পেরেছি এটা অনেক বড় আমার কাছে”। ভোলার এই অবস্থা দেখে মন ভালো নেই হবু স্ত্রী-র। তবে মানুষের আপদে-বিপদে বরাবরই পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ভোলার পরিবারের সদস্যদের। কাউকে বিপদে পড়তে দেখলেই এক ডাকে ছুটে যান ভোলার দাদারাও, এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, “আগের বারেও যখন আগুন লাগে ও ছুটে এসেছিল। আগুন তখন দাউদাউ করে জ্বলছে। প্রায় তিন তলার সমান উঠে গিয়েছে আগুনের শিখা। আমরা সমস্ত পাড়ার লোক বাইরে বাইরে দাঁড়িয়ে। অনেকে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে। ও তখন একা হাতে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভয়ে সামনে যাওয়ার সাহস দেখায়নি। কিন্তু ওর সাহস দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই”। এদিকে বাড়িতে যখন ছোবল মারছে আগুনের লেলিহান শিখা, ঠিক সেই সময়ে অ্যাডমিট কার্ড বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা যায় ওই এলাকার এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। বিধ্বংসী আগুন গ্রাস করছে গোটা বাড়িকে, আগুনের দাপটে জ্বানলার কাঁচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। তবুও ভয় পায়নি সুমিত। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড রক্ষা করেছে সে। সুমিতের এই সাহসিকতা সাড়া ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
আরও পড়ুন- মিডিয়ায় জানাজানি হতেই ‘বোধদয়’ কলকাতা মেডিকেল কলেজের, আধা ঘণ্টায় মিলল বেড