কলকাতা: নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ। ১২ বছর হয়ে গেলেও এখনও সম্পন্ন হয়নি প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া। কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আটক ১৯-২০ জন চাকরিপ্রার্থী।
২০০৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ওঁরা। প্রত্যেকেই তাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা প্রত্যেকেই টেট পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। এরপর তাঁদের ইন্টারভিউ হওয়া সত্ত্বেও প্যানেল প্রকাশ করা হচ্ছে।
তাঁদের আরও অভিযোগ, ওই একই বছর একই পদে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, এমন উত্তর ২৪ পরগনার পরীক্ষার্থীদের প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে এখানেই। উত্তর ২৪ পরগনার পরীক্ষার্থীদের প্যানেল প্রকাশিত হলেও, কেন বার করা হচ্ছে না দক্ষিণ ২৪ পরগনার চাকরিপ্রার্থীদের প্যানেল?
রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, কোর্টে মামলা চলছে। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, কোর্টের অজুহাত দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ হচ্ছে না। কিন্তু সেই অজুহাত বহাল থাকছে না উত্তর ২৪ পরগনার চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবিতে এদিন বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থীদের আটক করে নিয়ে যায়।
এক জন চাকরিপ্রার্থী বলেন, “১২টা বছর কেটে গিয়েছে। আমার চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে। টেট উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইন্টারভিউও হয় আমাদের। কিন্তু প্যানেল বার করা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, সেটাই বুঝছি না।”
প্রসঙ্গত, গত ১০ তারিখেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীরা ২০১৪ সালে প্রাইমারি টেট পাশ করেছেন। কিন্তু এখনও চাকরি না মেলায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পর্ষদের দফতরের সামনে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে গিয়ে সেদিন উত্তেজনা আরও বাড়ে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। চ্যাঙদোলা করে বিক্ষোভকারীদের গাড়িতে তোলে পুলিশ। ৬০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।
২০১৪ সালের প্রাইমারি টেট পাস ট্রেন্ড নট ইনক্লুডেড চাকুরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ দেখান বিধান নগরের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দফতরের সামনে।
এক বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থী বলেন, “২০১৪ সাল থেকে আমরা বঞ্চিত। আমাদের সকলেরই চাকরির প্রয়োজন। আমাদের সেই চাকরি দেওয়া হোক।”
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণদের শংসাপত্র দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এবার সেই শংসাপত্র পেতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণহীন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, সার্টিফিকেট না পাওয়ায় তাঁর মক্কেলরা অন্য রাজ্যে চাকরি করার আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছে তাঁরা পাশ করেছেন, তাও জানা যাচ্ছে না।
বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়। প্রাথমিক টেটে সার্টিফিকেট না দিলে টাকা ফেরাতে বোর্ডের কী অবস্থান তা জানতে চেয়েছে আদালত। অর্থাৎ শংসাপত্র না দিলে পরীক্ষার্থীদের টেটের ফর্ম কেনার যে মূল্য তা ফেরত দেওয়া হবে কি, জানতে চাইল আদালত।
২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় পাশ করার পরেও শংসাপত্র পাননি প্রায় ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও যেমন আছেন। তেমনই আছেন প্রশিক্ষণ ছাড়া পরীক্ষার্থীও। শুক্রবার বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত বলেন, বোর্ডের সিদ্ধান্ত তারা কোনও প্রশিক্ষণহীনদের শংসাপত্র দেবে না।
আরও পড়ুন: ‘সন্ধান চাই’, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামে পড়ল পোস্টার