কলকাতা: অধীর চৌধুরীর জায়গায় কে হবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি? বেশ কিছুদিন ধরে এই জল্পনাই চলছিল। শনিবার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে প্রদেশ সভাপতির নাম ঘোষণা করেছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন শুভঙ্কর সরকার। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নাম ঘোষণার পরই শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। তৃণমূলকে বার্তা দিতেই কি রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ এই কংগ্রেস নেতাকে প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে? কে এই শুভঙ্কর সরকার? তাঁর রাজনৈতিক উত্থান কোন পথে?
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের যে আসন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের সেই নন্দীগ্রামে জন্ম শুভঙ্কর সরকারের। স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারে বেড়ে ওঠা শুভঙ্করের রাজনীতিতে হাতেখড়ি কলেজ জীবনে। ১৯৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাশ করেন। লাইব্রেরি সায়েন্স নিয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি।
ছাত্র রাজনীতি ও কংগ্রেসের একাধিক দায়িত্ব পালন-
কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়ার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র ছিলেন তিনি। তারপর ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, শুভঙ্কর সরকার ছিলেন ছাত্র পরিষদের শেষ পরিচিত সভাপতি। যাঁর সময়ে এ রাজ্যে ছাত্র পরিষদ আন্দোলন করত।
ছাত্র পরিষদের পর কংগ্রেসের যুব সংগঠনেও দায়িত্ব পান শুভঙ্কর। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুব কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুব সংগঠন থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক হন শুভঙ্কর। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্রের দায়িত্বও পালন করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব সামলেছেন।
শুধু প্রদেশ কংগ্রেস নয়। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন শুভঙ্কর। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এআইসিসির সম্পাদক বা সচিব পদে ছিলেন। সেই পর্বের কিছুটা সময় ওড়িশার সহকারী পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব সামলেছিলেন।
চলতি বছরের ৩০ অগস্ট এআইসিসির সচিব নিয়োগ করা হয় তাঁকে। সেই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং মেঘালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর তার কয়েকদিন পরই প্রদেশ কংগ্রেসের ‘বস’ হলেন রাহুল ঘনিষ্ঠ এই নেতা।
ভোট ময়দানে শুভঙ্কর সরকার-
বিধানসভা নির্বাচনে একাধিকবার লড়েছেন অধীর চৌধুরীর উত্তরসূরি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর বিধানসভা আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নোয়াপাড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২ বারই পরাজিত হন তিনি।
বছর চৌষট্টির শুভঙ্কর সরকার এখন থাকেন বরাহনগরে। তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করার কারণ নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে চরম তৃণমূল বিরোধিতার কারণে আসন সমঝোতা না হওয়ার জন্য প্রদেশ কংগ্রেসের যে শিবির ক্ষুব্ধ ছিল, তার অন্যতম মুখ ছিলেন শুভঙ্কর সরকার। এবার তিনিই প্রদেশ কংগ্রেসের ‘বস’। রাজ্যে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে তিনি কী পদক্ষেপ করেন, সেটাই দেখার।