Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

সারদার ‘ম্যাডাম’ আট বছরে হয়ে উঠেছেন জেলের ‘দিদিমণি’

গত কয়েক বছরে জেলের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে বন্দিদের পড়ানো থেকে জেল হাসপাতালে নার্সের কাজ, সবেতেই পারদর্শী তিনি।

সারদার 'ম্যাডাম' আট বছরে হয়ে উঠেছেন জেলের 'দিদিমণি'
অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2021 | 6:37 PM

কলকাতা: ‘একজন ডুবন্ত জাহাজের নাবিককে আমি ছেড়ে আসতে পারিনি।’ সারদা কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার পর এমনটাই বলেছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। চিট ফান্ড সংস্থার বিশাল সাম্রাজ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম কর্ত্রী, বলা যেতে পারে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর দেবযানী সাধারণ কর্মী থেকে হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম ডিরেক্টর। সারদার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চিটফান্ডের কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের একেবারে পাশেই বসে থাকতে দেখা যেত তাঁকে। আজ, শনিবার রাজ্যে তাঁর বিরুদ্ধে চলা সব মামলা থেকে জামিন পেলেন দেবযানী।

২০০৮ সালে সারদা সংস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন দেবযানী। তাঁর পোস্টিং ছিল গুয়াহাটিতে। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি। সারদার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস বিভাগে কাজ করতেন তিনি। পরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হয় তাঁর। শেষের দিকে তাঁর সঙ্গে সুদীপ্তর ঘনিষ্ঠতার কথাও শোনা যাচ্ছিল। তবে, দেবযানীর দাবি ছিল সম্পর্ক ছিল শুধুই বস আর কর্মীর। এরপর ২০১৩-তে সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই শুরু হয় সুদীপ্তর খোঁজ। কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে গ্রেফতার করা হয় সুদীপ্তকে। সঙ্গে ছিলেন দেবযানী। বিপদের আশঙ্কা করেই কাশ্মীরে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ‘বস’ সুদীপ্তকে বিপদের মুখে ফেলে আসতে পারেননি বলে জানিয়েছিলেন দেবযানী। তারপর থেকেই জেলেই রয়েছেন তিনি। জেলে কখনও তিনি নার্স আবার কখনও দেবযানী।

২০১৩, এপ্রিল: ২৩ এপ্রিল কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় দেবযানীকে।

২০১৪, জুন: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু করে সিবিআই। অভিযুক্ত সুদীপ্ত, দেবযানী-সহ ছ’জনকে তাদের হেফাজতে নেয়। আদালতের নির্দেশে সিবিআই অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করে।

২০১৪, অক্টোবর: সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নামার ৮৪ দিন পর প্রথম চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর মামলায় প্রথম চার্জশিট পেশ করা হয়। তাতে অভিযুক্ত হিসেবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং সারদার গ্রুপ মিডিয়া সিইও কুণাল ঘোষের নাম রাখা হয়েছিল।

২০১৫, মে: সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত সবক’টি মামলার তদন্ত সিবিআই-এর হাতে নেই। এই সংক্রান্ত নানা মামলাতেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আদালতে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছিল তাঁকে। এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করেন অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়।

২০১৭, অক্টোবর: জেলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই সামনের সারিতে থাকেন দেবযানী। কখনও সঞ্চালিকা, কখনও গায়িকা তিনি। ২০১৭্ তে জেল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ছবি আঁকতে তুলিও তুলে নিতে দেখা যায় তাঁকে।

২০২০, ফেব্রুয়ারি: সারদার একসময়ের কর্ত্রী সব কাজেই পারদর্শ ছিলেন। ২০২০-তে জেল হাসপাতালে সেবিকার কাজ শুরু করেন তিনি। দিন-রাত পরিশ্রম করতে দেখা যায় তাঁকে। পাশপাশি জেলের শিক্ষিকাও হয়ে ওঠেন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাশ দেবযানী। বন্দিদের পড়ানোর দায়িত্বও নেন তিনি।

২০২০, ফেব্রুয়ারি: জামিনের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দেবযানী। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ নম্বর ধারাকে হাতিয়ার করেন তাঁর আইনজীবীরা। বলা হয়, সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে সরকারি আধিকারিকেরা যদি নয়ছয় করেন, তা হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, কিন্তু দেবযানী তো সরকারি অফিসার নন।

২০২০, ডিসেম্বর: ফের একবার সুদীপ্ত-দেবযানীকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার নির্দেশ দেয় সিবিআই। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। তারই শুনানিতে সিবিআইয়ের তরফে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার আবেদন জানানো হয়। এরপরই শুরু হয় যৌথ জেরার আইনি প্রক্রিয়া।

২০২০, ডিসেম্বর: প্রায় সাত বছর জেলে থাকার পর খোদ সঙ্গী দেবযানীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। অভিযোগ, দেবযানী নিজের বোনকে ডাক্তারি পড়াতে বেসরকারি কলেজে ভর্তি করানোর জন্য সুদীপ্তকে চাপ দিয়ে চেক ও নগদ মিলিয়ে এক কোটি টাকা নিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লেখা চিঠিতে সারদা কর্তা এই অভিযোগ আনেন।

2021, জুন: রাজ্যের সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। শনিবার হাইকোর্টে ছিল সেই মামলার শুনানি। জামিন পেলেও এখনই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না তিনি, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ভুবনেশ্বর ও গুয়াহাটিতে।