কলকাতা: কো-অর্ডিনেটর নিজেই ‘সরকার’! দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর সত্যব্রত সাঁতরা একেবারে কল্পতরু। ঘোষণা করেছেন, তাঁর ওয়ার্ডের চার হাজার টাকার নিচে মাসিক আয় এমন মহিলাদের জন্য জানুয়ারি মাস থেকে আর্থিক প্রকল্প চালু করবেন তিনি। প্রকল্পের নামও ঠিক করে ফেলেছেন, ‘মায়ের আশীর্বাদ’!
এই প্রকল্পে প্রতি মাসে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ৪০০ টাকা করে ঢুকে যাবে। কো-অর্ডিনেটরের কথায়, ওয়ার্ড তহবিল থেকে ঢুকবে এই টাকা। এমনটাই ঘোষণা করেছেন সত্যব্রত সাঁতরা। আর এখানেই শেষ নয়। মাইক হাতে একেবারে অমায়িক তৃণমূল কোঅর্ডিনেটর। বলে চললেন, সরকার বেকার যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য লক্ষাধিক টাকা ঋণ দেয়। কিন্তু তিনি ঋণ দেবেন না। এমনিই এককালীন বড় অঙ্কের টাকা দেবেন ব্যবসা করার জন্য! পাশাপাশি, ওয়ার্ডের মেধাবী ছাত্ররা যাতে অর্থাভাবের কারণে স্কুল-কলেজ ছুট না হন, সেদিকেও যথেষ্ট নজর তাঁর। এর জন্য চার লক্ষ, পাঁচ লক্ষ… যত টাকা লাগে তিনি দেবেন। একেবারে সাক্ষাৎ গৌরি সেন! কিন্তু প্রশ্ন হল, শাসকদলের কো-অর্ডিনেটর এত টাকা পাবেন কোথায়? এই অর্থের উৎস কী?
১৭ তারিখ থেকে মায়ের আশীর্বাদের ফর্মও দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সত্যব্রত সাঁতরা। ফর্ম পাওয়া যাবে, গৌরি সেন, থুরি সত্যব্রত সাঁতরার কো-অর্ডিনেটর কার্যালয় থেকে। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধী শিবির।
বিজেপি নেতা বিমলশঙ্কর নন্দ এই বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, “এতদিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের যে সাফল্যের কথা বলা হচ্ছিল, সেই সাফল্য তাহলে হয়নি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সব মায়েদের কাছে তাহলে পৌঁছায়নি। সেই জন্যই একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। একটি দলের একটি ওয়ার্ড কমিটির হাতে কত টাকা থাকতে পারে, যে সাধারণ মানুষ বিশেষত দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের ৪০০ টাকা করে দেওয়া হবে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য টাকা দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে তাঁরা নিজেদের প্রকল্প তৈরি করবেন, নিজেরাই প্রকল্প ঘোষণা করবেন। হয়ত প্রতিটি জায়গাতেই স্থানীয় স্তরে এত শক্তিশালী নেতা তৈরি হয়েছেন। তাহলে, পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্র দূরীকরণে আর সময় লাগবে না।”
কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএম নেতা পলাশ দাসও। বাম নেতার কথায়, “তিনি তাঁর পক্ষ থেকে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, দরিদ্র মানুষকে ৪০০ টাকা করে মাসে মাসে দেবেন। আবার শুনলাম তিনি বলছেন, সরকার যে ঋণ দেয়, সে সব ব্যাপার নয়। উনি নাকি যে ব্যবসা করবে এমন আগ্রহী কেউ হয়, তাঁকে এক লাখ টাকা দুই লাখ টাকা দিয়ে দেবেন। কত টাকা আছে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের যে এভাবে টাকা দিতে পারে? তদুপরি প্রকাশ্যে এটা বলার মতো জায়গায় যাওয়ার মতো কত ঔদ্ধত্য এদের আছে। পশ্চিমবঙ্গের সব পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতকে লুঠ করছে।”
কো-অর্ডিনেটর কীভাবে এত টাকা দেবেন, তা নিয়ে বেশ সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও। তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর সত্যব্রত সাঁতরা নিজে অবশ্য এখনও পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, এই নিয়ে যদি কিছু বলার হয়, তবে তিনি তা দলের অভ্যন্তরে বলবেন। তবে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, নিজের আর্থিক সামর্থ্য থেকেই এই ভাবনাগুলির রূপ দিতে চাইছেন সত্যব্রত বাবু। এ ছাড়া কো-অর্ডিনেটর তহবিলে যে টাকা থাকে, সেই টাকাও খরচ করার কথা তিনি বলেছেন। একইসঙ্গে বেশ কিছু পারিবারিক ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। সেই ব্যবসার টাকারও একাংশ নিজের এই ভাবনায় ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তিনি।