কলকাতা: গড়াল বাংলার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চাকা। ট্রেনবোঝাই যাত্রী নিয়ে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে নিউ জলপাইগুড়ি। আজ সব কোচ হাউসফুল। কিন্তু কাল, পরশু বা তার পর? শয়ে শয়ে টিকিট পড়ে বন্দে ভারতের। চাইলে এখনই টিকিট কেটে চড়তে পারেন সেমি হাই স্পিড ট্রেনে। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেসের টিকিট পেতে যাত্রীরা যখন হন্যে, তখন বন্দে ভারতের এই দশা কেন? কেন নেই যাত্রীদের উৎসাহ? দায়ী কি টাইম টেবিল? দায়ী কি বেশি ভাড়া? নাকি এতটা রাস্তা বসে যেতে অনীহা যাত্রীদের? সময় কমল, তাও কেন সিট ফাঁকা?
লিন সিজন বা ভাটার মরসুম, বলছে রেল। কিন্তু সেটাই কি একমাত্র কারণ? পূর্ব রেলের সিপিআরও একলব্য চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আমাদের রেলওয়ের পরিভাষায় একে বলে লিনড সিজ়ন। জানুয়ারি থেকে মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লিনড সিজন ধরে রাখি। আরেকটা লিনড সিজন হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের শুরু। এই সময়ে পরীক্ষা থাকে। কেউ কি আর জানুয়ারি মাসে নিতে পারে? তারপরও আমরা বুকিংয়ের যা ট্রেন্ড দেখছি, তাতে সারা বছর ফুল হাউজ় চলবে।”
তবে অনেকেরই মতে বেশ কয়েকটি বিষয় এর পিছনে কাজ করছে। প্রথমত, এই ট্রেনটি সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে হাওড়া থেকে ছাড়বে। সেক্ষেত্রে দুপুরে গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছবে ট্রেনটি। তখন সিকিম কিংবা পাহাড়ে ওঠাটা সময় কার্যত পেরিয়ে যাবে। একটা দিন সেখানেই থাকতে হতে পারে পর্যটকদের। সেই বিষয়টি কাজ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাঙালিদের অনেকেই রাতের ট্রেনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অফিস সেরে বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে ট্রেনে ওঠেন। পরের দিন সকালে এনজিপি নেমে, সেখান থেকে পাহাড়ের উদ্দেশে গাড়ি ধরে নেন। পাহাড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই অভ্যাসেই অভ্যস্ত অনেকে।
তৃতীয়ত, বন্দে ভারত সেমি হাইস্পিড ট্রেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেছেন, সেই গতি কিন্তু এখনকার ট্র্যাকে উঠবে না। ফলে সাড়ে সাত ঘণ্টা সময় লেগেই যাবে। সেক্ষেত্রে ঠিকঠাক চললে শতাব্দী এক্সপ্রেসই সাড়ে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে দেবে। সময়ের ফারাক খুব একটা বেশি হচ্ছে না। অথচ বন্দে ভারতের ক্ষেত্রে ভাড়া অনেকটাই বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষয়গুলো রেলকে ভাবাবে।
ট্যুর অপারেটদের বক্তব্য, একটি নতুন প্রোডাক্ট যখন বাজারে আসে, তখন তাকে একটু সময় দিতে হয়। সেটা কীভাবে চলবে, তার চাহিদা কীভাবে মানুষের মধ্যে বাড়বে, সেটা কিছুদিন চললে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ে। কিছুদিন এই ট্রেনটি চলার পর বিষয়টা সম্পর্কে একটা ধারণা হবে। বন্দে ভারতের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে, যাত্রাপথের সময়সীমা। কারণ এই ট্রেন যে পরিমাণ সময় নিচ্ছে, শতাব্দীর ক্ষেত্রে তার খুব একটা বেশি হেরফের হচ্ছে না।