Grant for Schools: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পিছু ১০ টাকা অনুদান ‘ভিক্ষা’ নাকি! প্রশ্ন উঠতে কী ব্যাখ্যা পর্ষদ সভাপতির
Madhyamik Examination: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পিছু ১০ টাকা হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ হবে, সেই টাকা স্কুলের ফান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পড়ুয়া পিছু মাত্র ১০ টাকায় কী হয়? আজকের দিনে ১০ টাকার মূল্য কী? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শিক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
কলকাতা: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পড়ুয়া পিছু ১০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্য শিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার্থীরা যাতে ঠিকঠাকভাবে পরীক্ষায় বসতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করেছে মধ্য শিক্ষা পর্ষদ। পড়ুয়া পিছু ১০ টাকা হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ হবে, সেই টাকা স্কুলের ফান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পড়ুয়া পিছু মাত্র ১০ টাকায় কী হয়? আজকের দিনে ১০ টাকার মূল্য কী? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শিক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
কী কাজে এই অনুদানের টাকা ব্যবহার করতে হবে স্কুলগুলিকে, সেই বিষয়ে পর্ষদের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই। তবে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের খরচের কিছুটা অংশ, কিংবা পরীক্ষার্থীদের জলখাবারের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে এই অর্থ ব্য়বহার করা হতে পারে।
মধ্য শিক্ষা পর্ষদের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করতেই টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এটিকে পরীক্ষার্থী পিছু ১০ টাকা হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। বরং পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পর্ষদের সামগ্রিক প্রয়াসকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখার পক্ষপাতী রামানুজবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, মধ্য শিক্ষা পর্ষদের লাগাতার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। এটি যে কোনও বিচ্ছিন্ন একটি সিদ্ধান্ত নয়, সেকথাও বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। ২০২২ সাল থেকে কীভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে কথাও তুলে ধরেন তিনি। পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে মনিটরিং এবং শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সাম্মানিকের ব্যবস্থাতেও অনেক বদল এসেছে বলে জানান রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সভাপতির কথায়, এই অনুদানের সিদ্ধান্তও পর্ষদের সামগ্রিক প্রয়াসের একটি অঙ্গ। তাঁর মতে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, তার জন্য স্কুলগুলি বিভিন্ন ব্যবস্থা করে থাকে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্ষদও স্কুলগুলির মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে। সঙ্গে এও জানালেন, গোটা দেশে মধ্য শিক্ষা পর্ষদই একমাত্র বোর্ড, যারা এই পদক্ষেপ করেছে।
এক্ষেত্রে ১০ টাকার মূল্য দিয়ে গোটা বিষয়টি বিবেচনা করতে রাজি নন তিনি। পর্ষদ সভাপতির কথায়, ‘আমরা যাতে এক বেলার জন্য, এক বারের জন্য, এক দিনের জন্য পাশে দাঁড়াতে পারি… এটা সেই চেষ্টা। এটাকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে।’
১০ টাকায় কী হয়? এই নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই নিয়েও মুখ খুললেন তিনি। বললেন, ‘অনেকেই মনে করতে পারেন, দশ টাকায় কী হয়! কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড।’ তাঁর ব্যাখ্যা, যদি কোনও স্কুলে ৫০০ পড়ুয়া থাকে, তাহলে সেখানে মোট ৫ হাজার টাকা যাবে। জানালেন, এই অনুদানের টাকা দিয়ে স্কুলগুলি চাইলে, অনেক রকম ভাবে পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকতে পারে। সেই কারণেই পর্ষদের সিদ্ধান্তে কোনও বিশেষ এক ধরনের কাজের কথা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। স্কুলগুলি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই অনুদান ব্যবহার করতে পারে।
যদিও শিক্ষাবিদদের একাংশ পর্ষদের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। অমল মুখোপাধ্যায় যেমন এই অনুদানকে ‘ভিক্ষার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলছেন, ‘এটা কি কাজের স্বীকৃতি, নাকি ভিক্ষা? দেখে তো মনে হচ্ছে পর্ষদ ভিক্ষা দিতে চাইছে। এটা খুব লজ্জার কথা যে ১০ টাকা দেওয়া হবে। এটা ভাবনার অতীত। আজকের দিনে ১০ টাকার কোনও মূল্য নেই।’
অধ্যাপক দেবাশিস সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ কোনও বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নয়। বরং স্কুলের পরিকাঠামো, শিক্ষক পদ তৈরি করা ও স্বচ্ছভাবে নিয়োগ করার বেশি প্রয়োজন বলেই মনে করছেন তিনি। বলছেন, ‘পঠন পাঠনের মান ও মাত্রা কখনও এই উৎসাহ অনুদানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয় না। এটা কোনও ব্যক্তিগত মত নয়, এটাই বিজ্ঞান এবং এটা সবসময় সত্য।’