কলকাতা: দক্ষিণবঙ্গে দেরিতে আসছে বর্ষা। সময়ের দু’দিন আগে কেরলে বর্ষা ঢুকেছে এ বছর। উত্তরবঙ্গেও বর্ষা এসেছে চারদিন আগে। তবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বরাতে সে সুখ নেই। অর্থাৎ গলদঘর্ম দশা অব্যাহত থাকবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ক্যালেন্ডার মানলে শুক্রবার অর্থাৎ ১০ জুনই বর্ষা ঢুকে পড়ার কথা দক্ষিণবঙ্গের একটা অংশে। ১১ জুন বর্ষা ঢোকার কথা কলকাতায়। কিন্তু মৌসমভবনের যে পূর্বাভাস, তাতে কোনওভাবেই আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আগমনের কোনও সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ সময়ে বর্ষা আসছে না কলকাতা-সহ দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১০ জুন সুন্দরবন ঘেঁষে মৌসুমী বায়ু ঢোকে। এই মৌসুমী বায়ুর হাত ধরেই শুরু হয় বর্ষার বৃষ্টি। ১১ জুন কলকাতায় ঢোকে বর্ষা। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। মৌসমভবনের বার্তা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্র প্রদেশের দিকে বর্ষা এগোতে পারে। তবে বাংলায় সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। এখনও পর্যন্ত এই মরসুমে যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে উত্তরবঙ্গে ২৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে ৪২ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রে তা ৯৫ শতাংশ কম।
তবে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, সঙ্গে মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় বেশ কিছু জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার,আলিপুরদুয়ারে। দার্জিলিং, কালিম্পং, দুই দিনাজপুর, মালদহের দু’ এক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। ১১ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলবে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে।
কিন্তু কেন দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে এতটা তারতম্য হচ্ছে? কারণ, উত্তরবঙ্গের যে বায়ুপ্রবাহ তা মূলত দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকছে পাহাড়ে। দখিনা পশ্চিমী বাতাস পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে মেঘ তৈরি হচ্ছে। যার জেরে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সর্বত্র টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে দখিনা পশ্চিমী বাতাস এলে খুব একটা লাভ হয় না। বরং অস্বস্তিকর গরমটা থেকেই যায়। দক্ষিণবঙ্গে দরকার দখিনা পূবালি বাতাস। বঙ্গোপসাগর থেকে মোড় নিয়ে তা ঢুকলে তখনই মেঘ তৈরি হবে, বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর তা মোড় নেবে তখনই, যখন উপকূলে কোনও ঘূর্ণাবর্ত না নিম্নচাপ তৈরি হবে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে বঙ্গোপসাগরে বাংলার উপকূলে নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা দেরিতে আসবে।