কলকাতা: ‘হরিদাস পাল’ শব্দটি অসংসদীয় কি না, তা নিয়ে আলোচনার দাবি উঠল বিধানসভায়। তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায় মঙ্গলবার দাবি করেন, ‘হরিদাস’ কথার অর্থ ‘হরির দাস’। সেক্ষেত্রে এই শব্দটি অসংসদীয় কেন হবে? তা নিয়েই প্রশ্ন তাপস রায়ের। বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি। আর সেই আলোচনার দাবিতে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই সমর্থন জানাল। কিন্তু কেন হঠাৎ এই ‘হরিদাস পাল’ অসংসদীয় কি না, তা নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ উঠল বিধানসভায়? প্রেক্ষাপটটি তৈরি হয়েছিল সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সময়ে। তখন তিনি বিরোধী দলরে বিধায়কদের খোঁচা দিয়ে, ‘কে হরিদাস পাল?’ মন্তব্য করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের মন্তব্যের পর বিধানসভায় বিরোধী বিধায়করা তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। তারপর আজ কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে তৃণমূলের আনা প্রস্তাবে আলোচনা চলছিল বিধানসভায়। বিজেপির পক্ষ থেকে হিরণ চট্টোপাধ্য়ায় বক্তব্য রাখার সময় কিছু মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। বিধানসভার উপাধ্যক্ষ সেই মন্তব্যগুলিকে বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেন। বলেন, এই ধরনের অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। তখনই এর প্রতিবাদ করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর প্রশ্ন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হরিদাস পাল বললে সেটা বাদ যায় না। আর এসপি, জেলা শাসকরা সব চোর এটাকে বাদ দিতে হবে? হরিদাস পাল কি সংসদীয় শব্দ!’
সেই সময় উপাধ্যক্ষ অবশ্য বলেন, ‘হরিদাস পাল’ শব্দটি হল একটি লব্জ। এটা কোনও অসংসদীয় শব্দ নয় বলেই দাবি তাঁর। আর তখনই চিৎকার, হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায় বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে। তখন বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় উঠে দাঁড়িয়ে অনুরোধ করেন, ‘হরিদাস পাল’ শব্দবন্ধটি কোনও অসংসদীয় শব্দ কি না, তা নিয়ে বিধানসভায় যাতে আলোচনা হয়। তাপসবাবুর বক্তব্যে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের বিধায়করাই টেবিল বাজিয়ে সমর্থন জানান। যদিও তাতে উপাধ্যক্ষ রাজি হননি।
এরপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা দাবি করেন, কোন শব্দটি সংসদীয় আর কোনটি অসংসদীয় তা নিয়ে একটি বই প্রকাশের জন্য। বললেন, ‘হরিদাস পাল অসংসদীয় শব্দ কি না সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ঘেউ ঘেউ নিয়ে কি কোনো বিতর্ক আছে? মুখ্যমন্ত্রী গতকাল আমাদের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ বলেছিলেন। ওটা তো সারমেয়রা করে। আমরা কি তাই?’
উল্লেখ্য, এই ‘হরিদাস পাল’ শব্দবন্ধটি কোথা থেকে উৎপত্তি হল… তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে অতীতেও। বাঙালিরা অনেকেও কথায় কথায় বলে থাকেন, ‘কে তুমি হরিদাস পাল?’ কিন্তু এই হরিদাস পাল আসলে কে? সবথেকে বেশি চর্চিত যে তথ্যটি রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করা এক হরিদাস পালের নাম। কথিত আছে, হুগলির রিষড়ার এক গন্ধবণিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ওই ব্যক্তি কলকাতায় এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। শুরুতে সংসার টানতে গিয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ করেই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘোরে। হরিদাস পালের নিঃসন্তান মামা নিজের বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকার দিয়ে যান ওই হরিদাসকে। ঋণের দায়ে জর্জরিত হরিদাস মামার লিখে দিয়ে যাওয়া সম্পত্তির বলে রাতারাতি হয়ে যান ধনকুবের। নতুন করে বিদেশি কাঁচ ও লণ্ঠনের ব্যবসাও শুরু করেছিলেন।