কলকাতা: অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি। জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তিনি। এতদিন পর্যন্ত জেলার লোকেরাই বলতেন, তাঁর নামে নাকি বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। কিন্তু গোটা ছবিটাই বদলে গেল বৃহস্পতিবার। যে জেলায় এতদিন অনুব্রতর নাম শুনলেই কাজ হয়ে যেত, সেই জেলার মাটিতে দাঁড়িয়েই এদিন অনুব্রতকে শুনতে হয়েছে, ‘চোর চোর, গরু চোর’।
ক্লাস এইট অবধি পড়াশোনা অনুব্রত মণ্ডলের। এরপর আর স্কুলমুখো হননি। বসে পড়েন বাবার দোকানে। ছোট থেকেই ডাকাবুকো অনুব্রত। অমন বিশাল চেহারা, গমগমে গলা। নজর এড়ায়নি সে সময় ক্ষমতার অলিন্দে থাকা কংগ্রেসের। নয়ের দশকের শুরুতে স্থানীয় এক যুব কংগ্রেস নেতার নজরে পড়েন অনুব্রত। সেখান থেকেই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রীর সঙ্গে পরিচয় করানো।
১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেসব নেতারা কংগ্রেস ছেড়ে এসেছিলেন, সে তালিকায় নাম ছিল ‘কেষ্ট’র। রাজ্যে তখন বামেদের দাপট। তার মধ্যেই জেলায় একটু একটু করে সংগঠনকে শক্তিশালী করেন অনুব্রত। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে অনুব্রতও শক্তি বাড়ান। তবে ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় বাংলা চিনেছিল বীরভূমের এই ‘বাহুবলী’ নেতাকে, যাঁর কাছে বিরোধীদের জন্য ভোটের ঢাকের বোল ছিল ‘চড়াম চড়াম’।
এরপর ‘গুড় বাতাসা’, ‘নকুলদানা’, ‘পাচনের বারি’ আরও কত দাওয়াই দিয়েছেন বিরোধীদের। ভোট এলেই সামনে আসত অনুব্রতর সেসব ভিডিয়ো। তাঁর ‘জ্বালাময়’ ভাষণে বাহুবল দেখানোর ইঙ্গিত থাকত স্পষ্ট। ২০১৮ সালে এই অনুব্রতের ‘জাদু’তেই নাকি বিরোধীরা মনোনয়ন জমা করতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও অনুব্রত বলেছিলেন, ‘লোকই নাই, প্রার্থী দিবে কোথা থেকে।’ গত পুরভোটেও অনুব্রত নিজের ‘ক্ষমতার’ প্রমাণ রেখেছেন।
কিন্তু সেই বগটুইয়ের পর থেকে বারবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের স্ক্যানারে বড় বড় অক্ষরে দেখা দিয়েছে অনুব্রত মণ্ডল নামটি। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা, গরু পাচার মামলা জুড়েছে তাতে। গরু পাচার মামলাতেই ১০ বার নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। হাজিরা মাত্র একবার। বাকি প্রতিবারই বলেছেন, শরীর ভাল নেই তাঁর। মঙ্গলবারও শরীর ভাল না থাকার কথা সিবিআইকে বলেই ফিরেছিলেন বোলপুর। বুধবার মাঝরাতে তাঁর বাড়ির পাশে রতন কুঠিতে গিয়ে ওঠেন এক দল সিবিআই আধিকারিক। ১০০-এর কাছাকাছি কেন্দ্রীয় জওয়ান। আর বৃহস্পতিবার বোলপুরে নীচুপট্টি এলাকায় অনুব্রতর বাড়ি থেকে টেনে বের করে নিয়ে সোজা আসানসোল আদালত। ১০ দিনের সিবিআই হেফাজত। গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল।