Mamata Banerjee Updates: আমাদের সবরকম পাওয়ার যোগ্যতা ছিল, কিন্তু অপদার্থতা আমাদেরই: মমতা
Mamata Banerjee: বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির কাছে মমতার পরামর্শ, যাতে আইসিসিইউগুলিকে ইনফেকশন মুক্ত রাখা হয়। বললেন, 'স্পেন, আমেরিকায় একটু বেশি কোভিড হচ্ছে। এখানেও কেরলে হয়েছে। যাঁরা যাঁরা পারবেন, একটু বেশি করে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আমরা জোর করে কিছু করছি না। ব্যবসায় কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু ভিড় জায়গায় যখন কেউ যাবেন, একটু সতর্ক থাকবেন।'
কলকাতা: বিশ্ব জুড়ে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে আবার উদ্বেগ বাড়াতে শুরু করেছে, তার দিকে সতর্ক নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে আবারও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির কাছে মমতার পরামর্শ, যাতে আইসিসিইউগুলিকে ইনফেকশন মুক্ত রাখা হয়। বললেন, ‘স্পেন, আমেরিকায় একটু বেশি কোভিড হচ্ছে। এখানেও কেরলে হয়েছে। যাঁরা যাঁরা পারবেন, একটু বেশি করে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আমরা জোর করে কিছু করছি না। ব্যবসায় কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু ভিড় জায়গায় যখন কেউ যাবেন, একটু সতর্ক থাকবেন।‘
নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে আর যা যা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- “বাংলার দীর্ঘদিন ধরে অনেক ব্যাপারেই বঞ্চিত। এমনকী কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিভিন্ন মাপকাঠি মেপে কোনও কোনও ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেয়। এখনও পর্যন্ত স্বীকৃতি ধ্রুপদী ভাষা- তামিল (২০০০), সংস্কৃত (২০০৫), তেলুগু ও কন্নড় (২০০৮), মালায়লাম (২০১৩) এবং ওড়িয়া (২০১৪)। আমি আজ একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েছি। আমরা গবেষণামূলক তথ্য জোগাড় করে দেখেছি। ইতিহাস, প্রাচীন লিপি ও ভাষার বিবর্তন নিয়ে এই গবেষণা দেখাচ্ছে বাংলা ভাষার জন্ম ও বিবর্তন হয়েছে গত আড়াই হাজার বছর ধরে। এই ধ্রুপদী প্রাচীনতা এবার সরকারের স্বীকৃতির যোগ্য। আমরা অনেক পণ্ডিত ও অফিসারদের নিয়ে চার খণ্ডে প্রামাণ্য গবেষণাপত্র তৈরি করেছি। সেটায় দেখা যাচ্ছে, বাংলা অনেক আগেই ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বঞ্চিত করা হয়েছে।”
- “অন্য রাজ্যের ক্লাসিকাল ভাষা যদি সেগুলি স্বীকৃতি পায়, তাহলে আমাদের ভাষা কেন পাবে না? আমাদের সবরকম পাওয়ার যোগ্যতা ছিল। কিন্তু অপদার্থতা আমাদেরই। কারণ, আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কখনও এটা নিয়ে ভাবেননি, চর্চাও করেননি। তাঁদের রাজনীতি নিয়ে যতটা মন ছিল, এসব করা নিয়ে কোনও মন ছিল না। এটা হয়ে গেলে, এটি একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স তৈরি হবে। বাংলা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষার মধ্যে একটি। আমরা গবেষণার মাধ্যমে বাংলার প্রাচীনতা ও ধ্রুপদী মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করলাম। কেন্দ্র এবার ক্লাসিক্যাল ভাষা হিসেবে বাংলাকে মেনে নিক। এই নিয়ে আমি আজকেই কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছি।”
- “আমরা রাজ্যের নাম সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা দু’বার বিধানসভায় বিল পাশ করিয়েছি। ওরা (কেন্দ্র) যা যা তথ্য চেয়েছে, সব দিয়েছি। তাও দীর্ঘদিন ধরে বাংলা রাজ্যের নামটি তারা দিচ্ছে না। বোম্বে থেকে মুম্বই হয়েছে, উড়িষ্যা থেকে ওড়িশা হয়েছে, আমাদের কেন হবে না? আমাদের কী অপরাধ? রাজ্যের নাম বাংলা হবে যে সব ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ও পড়াশোনা করতে যায়, তাঁরা অনেক সুবিধা পাবে। কোনও বৈঠকে গেলে আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হয়ে শেষের দিকের জন্য। ডাব্লিউ, এক্স, ওয়াই, জেড। বাংলার গুরুত্বটা কমিয়ে দেওয়া হয়। আমি মনে করি না, এখন আর ভাগাভাগি করার প্রয়োজন আছে। পঞ্জাব ভারতের একটি রাজ্য, আবার পাকিস্তানেও একটি রাজ্য আছে পঞ্জাব। সেরকম বাংলাদেশ নামে যদি একটি দেশ থাকতে পারে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন বাংলা হতে পারে না? এই নিয়ে আমরা অনেকবার অনুরোধ করেছি।”
- “গঙ্গাসাগর মেলায় আমরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এবারও খরচ করেছি। কুম্ভমেলা স্বীকৃতি পেয়েছে আমরা খুশি। কুম্ভ মেলা তো অনেক দিন পর পর হয়, প্রতি বছর হয় না। কিন্তু গঙ্গাসাগর প্রতি বছর হয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি দ্বীপের উপর গঙ্গাসাগর অবস্থিত। জল পেরিয়ে প্রত্যেকটা মানুষকে যেতে হয়। এক কোটি লোক সেখানে যাতায়াত করেন। সংখ্যাটা যদি বছরের হিসেবে ধরা হয়, তাহলে তো অনেক। গত বছরও আশি লাখের উপর মানুষ এসেছিলেন। এবছরও আমাদের ধারণা, যেহেতু কুম্ভ নেই, সংখ্যাটা এক কোটির উপর ছাপিয়ে যাবে। তারা যদি সাহায্য পেতে পারে, বাংলা কেন সাহায্য পাবে না? বাংলার মেলা কেন জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাবে না? সেই নিয়েও আজ আমি চিঠি পাঠিয়েছি।”
- “বিভিন্ন তীর্থস্থানকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের জন্য আমরা ৭০০ কোটি টাকার উপর খরচ করেছি। কালীঘাট মন্দির শুধু রিলায়েন্স একা করছে না। ওনারা শুধু সোনার চূড়াটা করছেন। আর ভিতরের কিছু অংশের কাজ করছেন। আমরা ১৬৫ কোটি টাকা খরচ করেছি। ওদের খরচটা হল ৩৫ কোটি টাকা। কীভাবে হকারদের সরিয়ে, তাঁদের অ্যাডজাস্ট করে কাজটা করা হচ্ছে!”
- “দিঘায় হিডকো জগন্নাথ ধাম করছে। এটাতেও আমরা ২০৫ কোটি টাকা খরচ করছি। এছাড়া কচুয়া-চাকলায় ৯ কোটি ও ১৫ কোটি টাকা দিয়েছি। ইসকেন জন্য ৭০০ একর জমির অনুমতি দিয়েছি আমরা। তারকনাথ মন্দির, মাহেশের উন্নতি করেছি আমরা। তারাপীঠের উন্নয়ন করা হয়েছে। ফুল্লরা মন্দিরের জন্য এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণেও টাকা দেওয়া হয়েছে। জল্পেশ শিব মন্দিরের জন্য ৩১.৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।”
- কোভিড নিয়েও সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। “যতটা পারবেন সাবধানে থাকবেন। বিশেষ করে এটা ছড়াচ্ছে একটা জায়গা থেকেই। প্রাইভেট নার্সিংহোমের আইসিসিইউ থেকে। গতকালও এক বেসরকারি হাসপাতালে একজন মারা গিয়েছেন। যদিও তাঁর কোমর্বিডিটি ছিল। কিন্তু নার্সিংহোমগুলিতে এত রোগীর চাপ থাকে, তাদের আমি দোষ দেব না… আইসিসিইউগুলি হয়ত পরিষ্কার করতে পারে না। তবে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, যাঁদের ইমিউনিটি কম, তাঁদের বলব মাস্ক ব্যবহার করুন।”
- “ডাব্লিউবিসিএস ও ডাব্লিউপিএস-এ উর্দু, অলচিকি ও হিন্দি ভাষাকে যুক্ত করা হয়েছে”, জানালেন মমতা।
- ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ ব্যবস্থা নিয়ে কেন আপত্তি, তাও এদিন স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাদের ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো। বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ভাষা। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। এক একটি রাজ্য এক একটি আঞ্চলিক সমস্যা আছে। এক এক সময়ে এক এক জায়গায় ভোট হয়। কেউ স্থায়ী সরকার পায়, কেউ পায় না। অনেক সময় সরকার গঠন হলেও আবার কিনে নেওয়া হচ্ছে। এই যে প্রবলেমগুলি আছে। একসঙ্গে ভোট হলে, আমাদের কী? আমাদের তো ভালই, একবার খাটতে হবে। কিন্তু সমস্যা কোথায় জানেন? যদি কোনও রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হয়, তাহলে কি হবে? ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশনের মানে হল – প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব ইলেকশন। যেটা আমেরিকায় আছে। ভারত কিন্তু সংবিধানে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়।”