পোহাল নবমী নিশি। তিনটে দিন বাপের ঘরে দারুণ আদর শেষে উমার কৈলাসে ফেরার পালা। বুধবার দশমীর সকালে তাই চারিদিকে বিষাদের ছোঁয়া। আজ বাপের ঘর ছেড়ে স্বামীর ঘরে ফিরছেন তিনি। সকাল থেকেই গঙ্গার ধারগুলিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় দশমীর পুজো চলে। এরপর দেবী বরণ, সিঁদুর খেলা হয় মণ্ডপে মণ্ডপে। তারপর মাকে বিদায় জানানো। বিভিন্ন ঘাটে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জন।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজা কদমতলায় ৩৩৮টি, জাজেস ঘাটে ৫৩০টি, নিমতলা ঘাটে ১৬৫টি, বাগবাজার ঘাটে ৫১টি, মায়ের ঘাটে ১৮৩টি, রতনবাবুর ঘাটে ৬৫টি এবং কুমোরটুলি ঘাটে ৬১টি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৩৯৩টি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়েছে।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, বাজা কদমতলায় ২৪০ টি, জাজেস ঘাটে ৪৮০ টি,
নিমতলা ঘাটে ১১২ টি, বাগবাজার ঘাটে ৩৯ টি, মায়ের ঘাটে ১৬২ টি, রতন বাবুর ঘাটে ৫২ টি ও কুমোরটুলি ঘাটে ৪২ টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, গোটা কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ৭৬০ টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বাজা কদমতলায় ১৮১ টি, জাজেস ঘাটে ৩৭১ টি, নিমতলা ঘাটে ৫৫ টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে।
বিজয়া দশমীতে বর্ধমানের বাড়িতে দেবী দুর্গাকে বরণ করলেন চলচিত্র অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। দশমীর দুপুরে কলকাতা থেকে স্বামী রাজ চক্রবর্তী ও ছেলে ইউভানকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমানে বাজেপ্রতাপপুরে বাবার বাড়িতে আসেন অভিনেত্রী। বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীকে দেখা যায় আত্মীয়দের সাথে সেলফি তুলতে।
বিজয়ার সকালেই কোলাঘাট ও তমলুক সহ সর্বত্রই সিঁদুর খেলায় মাতলেন মহিলারা। উমার বিদায় বেলায় মন ভারাক্রান্ত সকলের।
মালদহের শরৎপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব। মহিলা পরিচালিত এই পুজোয় মায়ের বিদায়বেলায় সিঁদুর খেলা, সঙ্গে ঢাকের তালে দেদার নাচ।
দর্পণে বিসর্জনের পর মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মাতলেন মহিলারা। এদিন মাকে সিঁদুর পরিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে তারপর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। বুধবার সকালে জলপাইগুড়ি নিয়োগী বাড়িতে দর্পণ বিসর্জন হয়। তারপর পান্তাভাত খাইয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়।
বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি ছেড়ে উমা চললেন কৈলাশের পথে। ইলিশ মুড়ো দিয়ে কচুর শাক আর পান্তা ভাত খেয়ে। দশমীর পুজো দিয়েই বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে। পারিবারিক নিয়ম মেনে পান্তাভাত, ইলিশ মাছ, পুঁটি মাছ-সহ পাঁচ রকমের মাছ ও শাপলা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়েছে দেবী দুর্গাকে।
বাপের ঘর ছেড়ে কৈলাসে পাড়ি দিল উমা। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে বিষাদের সুর।
বাগবাজারে সিঁদুর খেলা।
রীতি মেনে মাকে বরণ ও দর্পণে দেখার পর বেহারাদের কাঁধে চেপে ইছামতীর পথে রওনা দিল টাকি পূবের বাড়ির দুর্গা।
শোভাবাজার রাজবাড়িতে সিঁদুর খেলার চল নেই। এখানে মায়ের পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর মহিলারা সিঁথিতে একে অপরকে সিঁদুর পরান। এরপর সেই সিঁদুর বছরভর পরেন তাঁরা।
মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার রাজবাড়িতে সিঁদুর খেলা।
রীতি মেনে দশমীর সকালে বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী নদীর সতীঘাটে শুরু হল ঘট বিসর্জন। নিয়ম মেনে বাঁকুড়া শহরের সমস্ত পুজো মণ্ডপ থেকে শোভাযাত্রা করে একে একে ঘাটে আসতে শুরু করেছে।
শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহারের বড়দেবীকে। রক্তবর্ণা বড়দেবী স্বপ্নে পাওয়া। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন কোচবিহারের মহারাজা। প্রচুর মানুষ প্রতি বছর এই পুজো দেখতে আসেন। ৫১২ বছরের পুরনো এই পুজো।
কলকাতার বিভিন্ন ঘাট ও জলাশয়ে ডিএমজি-র মোট ৬২টি দল মোতায়েন থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। থাকবে পুলিশের লঞ্চও। দিনভর টহল চলবে গঙ্গার বুকে। সূত্রে খবর, ৭টি ঘাটে ওয়াচ টাওয়ার থাকছে পুলিশের তরফে। ৪টি ব্যস্ততম ঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৩ জন ডিসি পদমর্যাদার পুলিশ কর্তা। সূত্রের খবর, মোতায়েন থাকছে মোট ২৫টি স্পিড বোট। এছাড়াও গঙ্গায় টহল দেবে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের জেট স্কি। বিসর্জনের দিন গঙ্গার ঘাটগুলিতে যাতে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা এড়াতে তৎপর পুলিশ।
প্রাচীন রীতি অনুসারেই পালন করা হয় দশমী। বীরভূমের সুরুল জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর আচার অনুষ্ঠানে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। নিয়ম অনুসারে সিঁদুর খেলা হয় না এখানে। তবে দশমীর সকাল থেকেই শুরু হয় অপরাজিতা পুজো। এই পুজোর পর অপরাজিতার লতা বেঁধে দেওয়া হয় সদস্যদের হাতে। দীর্ঘায়ু কামনা করেই এই রেওয়াজ পালিত হয়। মায়ের বিদায়ের আগে সুরুল জমিদার বাড়ির সদস্য ছাড়াও আশেপাশের মানুষ এখানে এসে বেলপাতার উপর দুর্গানাম লেখেন।
প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গারঘাটগুলিতে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তৎপর রয়েছে কলকাতা পুলিশ। গঙ্গার ২৯টি ঘাট ও আদিগঙ্গার ৫টি ঘাটে কড়া পুলিশি নজরদারি থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। একইসঙ্গে শহরের ৩৫টি জলাশয়েও থাকছে বিশেষ নজদারি। সূত্রের খবর, বাগবাজার, নিমতলা, বাজা কদমতলা ও গোয়ালির ঘাটে স্পিড বোটে ২টি ডিএমজি টিম মোতায়েন থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। এই টিমগুলি আবার সাঁতারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলেও খবর।
বড় দেবীর বিসর্জন। কোচ রাজবংশের বড়দেবীর পুজো এবার ৫১২ বছর পার করল। রাজ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে দেবীর বিসর্জন হবে আজ। সকাল থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু। এখানে অপরাজিতা পুজোর পরই পাশের লম্বা দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। ইতিমধ্যেই হাতে ডালা নিয়ে হাজির হয়েছেন বহু মহিলা। দেবীকে বরণ করে, মায়ের কপালে সিঁদুর ছুঁইয়ে চলবে সিঁদুর খেলা।
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরেখা। ভৌগলিক বিভাজন ভুলিয়ে দিয়ে দুই দেশের বাঙালিদের এক করে দেয় এই দিনটা। ইছামতীতে প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে। এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দেশ বিদেশের মানুষ ভিড় জমান উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে ইছামতীর ধারে। বিসর্জন ঘিরে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছে বিএসএফ ও বিজিবি। টাকি পুরসভা-সহ বসিরহাট পুলিশের তত্ত্বাবধানে গোটা এলাকাই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। ইছামতীর রাজবাড়ি ঘাট, ঘোষবাবুর, ঘাট, সৈয়দপুরের ঘাটে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ইছামতীর মাঝ বরাবর পেট্রলিং করবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী ও মেডিক্যাল টিম।