West Bengal Municipal Elections 2022: কিল-ঘুষি-লাথি খেয়ে বাড়ি ফিরতে ছেলের প্রশ্ন, ‘বাজে আঙ্কলগুলো মারল কেন?’

TV9 Bangla Digital | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Feb 28, 2022 | 11:03 AM

Municipal Elections 2022: ঠিক কী হয়েছিল ভোট রবিবারে? নিজের অভিজ্ঞতা লিখলেন টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি।

Follow Us

সৌরভ দত্ত:

দিনভরের মানসিক-শারীরিক চোট নিয়ে বাড়ি ফেরার পর সাত বছরের পুত্রসন্তান বলে উঠল, ‘বাবা বাজে আঙ্কলগুলো যেই আঙ্কলকে মারল, কেমন আছে? তোমার লাগেনি তো?’ সাতসকালে যে ঘটনাকে পেশাগত হয়রানি ভেবে ইগনোর করতে চাইছিলাম সেটা আর ইগনোর করা গেল কই! ঠিক কী হয়েছিল ভোট রবিবারে? সূর্যোদয়ের অব্যহতি পরই খবর পেলাম উত্তর দমদমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী শিবশঙ্কর ঘোষ আক্রান্ত। আক্রান্ত তাঁর পোলিং এজেন্ট-সহ একাধিক দলীয় কর্মী সমর্থক। সিনিয়রেরা শিখিয়েছেন, শোনা খবর সরেজমিনে যাচাই না করে হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ডের উত্তেজনায় লাগাম টানা জরুরি। সেই পাঠ স্মরণ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো না পর্যন্ত শোনা খবর মোবাইলে টাইপ করিনি।

এমবি রোড ধরে আলিপুর খেলার মাঠ সংলগ্ন ভোটকেন্দ্রে সাতটা পনেরো মিনিট নাগাদ পৌঁছই। ভোটকেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি স্কুলের গেটের মুখে একজন ব্যক্তি পাঁচ-ছ’জনের হাতে বুথ স্লিপ ধরিয়ে কিছু বোঝাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখে থমকালেন, কিন্তু থামলেন না। ভোটকেন্দ্রের কাছে অভিযোগকারীদের দেখতে না পেয়ে তাঁদের অবস্থান জানতে ফোন করি।

সিপিএম প্রার্থী বলেন, খেলার মাঠ থেকে আলিপুর বাজার হয়ে যেন সিপিএম পার্টি অফিসে আসি। সিপিএম পার্টি অফিস কোথায় দাদা? ঠিকানা জানতে যত জনকে এই প্রশ্ন করেছি তাঁদের দৃষ্টি বুঝিয়ে দিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের আগমন ‘দাদা’দের পছন্দ হয়নি। পার্টি অফিসের গলিতে ঢোকার মুখ থেকেই ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বাদ যাননি মহিলারাও। সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা।

লাইভে সেই খবর সম্প্রচার করার সময় খেলার মাঠের বাঁকে একদল পুরুষ-মহিলা মুখে মাস্ক পরে এগিয়ে আসছিল। ভোটে মাস্কের এমন সদ্ব্যবহার দেখে আশ্বস্ত হইনি। কারণ, মাস্ক পরিহিত মুখগুলো অন্য ভাইরাসে যে আক্রান্ত তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের দেখে অভিযোগ করতে থাকেন, “এঁরা বহিরাগত। এঁরাই আমাদের ভোট দিতে দেয়নি। ” সেই অভিযোগের পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিতে বুম বাড়ালাম। প্রতিক্রিয়া পেলাম না। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে গেল কথা কাটাকাটি, বচসা, হাতাহাতি।

সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা মাত্র শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের রোষ আছড়ে পড়ে আমার সহকর্মী দীপঙ্কর জানার উপরে। কিছু বুঝে ওঠার আগে দীপঙ্করের দিকে ধেয়ে যায় মুখোশ পরে থাকা লোকগুলো। চোখের নিমেষে দীপঙ্করকে রাস্তায় ফেলে দিল ওরা। দীপঙ্কর ক্যামেরা বুকে আগলে রেখেছে। আর দশ-বারো জন পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে দীপঙ্করকে লাথি-ঘুষি-চড়-থাপ্পড় মারছে। সঙ্গে বলে চলেছে, ‘ক্যামেরা ভেঙে দে। ভাঙ ক্যামেরা। ’ দীপঙ্করকে বাঁচাতে বলতে থাকলাম, অনেক মেরেছো। আর কত মারবে! এবার ছেড়ে দাও। আমরা চলে যাচ্ছি। তোমাদের দেখাচ্ছি না। কে শোনে কার কথা! মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করতে এতক্ষণ বুকের মধ্যে আগলে রাখা ক্যামেরা ওদের হাতে চলে গেল। তা দেখে ওদের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে আমি এবার সেটি বুকে আগলে কোমর ঝুঁকিয়ে নুইয়ে পড়ি।

আমার কাছ থেকে ক্যামেরা নেওয়ার জন্য পিঠে চড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকল। প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টিকল না। ক্যামেরা রাস্তায় আছাড় মারল। এরপর হাত থেকে বুম কেড়ে নিয়ে ভাঙার চেষ্টা করল একটি ছেলে। বুমের উইন্ডশিল্ড ছিঁড়ে ফেলল। বেশিক্ষণ এ ভাবে বুমে-মানুষে টানাটানি সম্ভব নয়। বোঝার চেষ্টা করছি, কতক্ষণে রোষে ইতি পড়বে। নাকি এবার আমার রাস্তায় পড়ে মার খাওয়ার পালা। এমন সময় দু’জন লাঠিধারী পুলিশকর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখে রণে ভঙ্গ দিল প্রায় পনেরো মিনিট ধরে হামলা চালানো লোকগুলো।

খানিক ধাতস্থ হয়ে দেখি এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় রক্তাক্ত। আমার সহকর্মী রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। হাউ হাউ করে কাঁদছে। চশমা ভাঙা। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে সংবাদমাধ্যমের অনভিপ্রেত উপস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দারা সে সব এক জায়গায় জড়ো করে জল বাড়িয়ে দিলেন। যতবার দীপঙ্কর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠেছে। জল বাড়ানো মানুষগুলো বলে উঠেছে, ‘ইস্, কী ভাবে মেরেছে। এটা ভোট!’ আঘাত প্রাপ্ত মনে-চেতনায় মলমের কাজ করেছে সাধারণ ভোটারের এই উপলব্ধি। আর মুখে হাসি ফুটিয়েছে সাত বছরের পুত্র সন্তানের কথাগুলো। শিশুমন বুঝে গিয়েছে, বাজে আঙ্কল কারা! তবে বাজে হলেও তাঁরা যে আঙ্কল শিশুমন তা-ও জানে। বিপরীত অবস্থানে থাকা মানুষও আঙ্কল। তাঁদেরও শ্রদ্ধা জানাতে হয়। সাত বছরের শিশু যে কথা জানে মুখোশ আড়ালে থাকা মুখগুলো তা জানে না। হায় রে গণতন্ত্র!

আরও পড়ুন: Municipal Elections 2022: ‘বিরোধীরা স্নান সেরে ফ্যান চালিয়ে চাদর চাপা দিয়ে ঘুমোক’, ভোট শেষে ‘টিপস’ অনুব্রতর

সৌরভ দত্ত:

দিনভরের মানসিক-শারীরিক চোট নিয়ে বাড়ি ফেরার পর সাত বছরের পুত্রসন্তান বলে উঠল, ‘বাবা বাজে আঙ্কলগুলো যেই আঙ্কলকে মারল, কেমন আছে? তোমার লাগেনি তো?’ সাতসকালে যে ঘটনাকে পেশাগত হয়রানি ভেবে ইগনোর করতে চাইছিলাম সেটা আর ইগনোর করা গেল কই! ঠিক কী হয়েছিল ভোট রবিবারে? সূর্যোদয়ের অব্যহতি পরই খবর পেলাম উত্তর দমদমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী শিবশঙ্কর ঘোষ আক্রান্ত। আক্রান্ত তাঁর পোলিং এজেন্ট-সহ একাধিক দলীয় কর্মী সমর্থক। সিনিয়রেরা শিখিয়েছেন, শোনা খবর সরেজমিনে যাচাই না করে হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ডের উত্তেজনায় লাগাম টানা জরুরি। সেই পাঠ স্মরণ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো না পর্যন্ত শোনা খবর মোবাইলে টাইপ করিনি।

এমবি রোড ধরে আলিপুর খেলার মাঠ সংলগ্ন ভোটকেন্দ্রে সাতটা পনেরো মিনিট নাগাদ পৌঁছই। ভোটকেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি স্কুলের গেটের মুখে একজন ব্যক্তি পাঁচ-ছ’জনের হাতে বুথ স্লিপ ধরিয়ে কিছু বোঝাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখে থমকালেন, কিন্তু থামলেন না। ভোটকেন্দ্রের কাছে অভিযোগকারীদের দেখতে না পেয়ে তাঁদের অবস্থান জানতে ফোন করি।

সিপিএম প্রার্থী বলেন, খেলার মাঠ থেকে আলিপুর বাজার হয়ে যেন সিপিএম পার্টি অফিসে আসি। সিপিএম পার্টি অফিস কোথায় দাদা? ঠিকানা জানতে যত জনকে এই প্রশ্ন করেছি তাঁদের দৃষ্টি বুঝিয়ে দিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের আগমন ‘দাদা’দের পছন্দ হয়নি। পার্টি অফিসের গলিতে ঢোকার মুখ থেকেই ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বাদ যাননি মহিলারাও। সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা।

লাইভে সেই খবর সম্প্রচার করার সময় খেলার মাঠের বাঁকে একদল পুরুষ-মহিলা মুখে মাস্ক পরে এগিয়ে আসছিল। ভোটে মাস্কের এমন সদ্ব্যবহার দেখে আশ্বস্ত হইনি। কারণ, মাস্ক পরিহিত মুখগুলো অন্য ভাইরাসে যে আক্রান্ত তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের দেখে অভিযোগ করতে থাকেন, “এঁরা বহিরাগত। এঁরাই আমাদের ভোট দিতে দেয়নি। ” সেই অভিযোগের পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিতে বুম বাড়ালাম। প্রতিক্রিয়া পেলাম না। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে গেল কথা কাটাকাটি, বচসা, হাতাহাতি।

সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা মাত্র শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের রোষ আছড়ে পড়ে আমার সহকর্মী দীপঙ্কর জানার উপরে। কিছু বুঝে ওঠার আগে দীপঙ্করের দিকে ধেয়ে যায় মুখোশ পরে থাকা লোকগুলো। চোখের নিমেষে দীপঙ্করকে রাস্তায় ফেলে দিল ওরা। দীপঙ্কর ক্যামেরা বুকে আগলে রেখেছে। আর দশ-বারো জন পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে দীপঙ্করকে লাথি-ঘুষি-চড়-থাপ্পড় মারছে। সঙ্গে বলে চলেছে, ‘ক্যামেরা ভেঙে দে। ভাঙ ক্যামেরা। ’ দীপঙ্করকে বাঁচাতে বলতে থাকলাম, অনেক মেরেছো। আর কত মারবে! এবার ছেড়ে দাও। আমরা চলে যাচ্ছি। তোমাদের দেখাচ্ছি না। কে শোনে কার কথা! মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করতে এতক্ষণ বুকের মধ্যে আগলে রাখা ক্যামেরা ওদের হাতে চলে গেল। তা দেখে ওদের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে আমি এবার সেটি বুকে আগলে কোমর ঝুঁকিয়ে নুইয়ে পড়ি।

আমার কাছ থেকে ক্যামেরা নেওয়ার জন্য পিঠে চড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকল। প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টিকল না। ক্যামেরা রাস্তায় আছাড় মারল। এরপর হাত থেকে বুম কেড়ে নিয়ে ভাঙার চেষ্টা করল একটি ছেলে। বুমের উইন্ডশিল্ড ছিঁড়ে ফেলল। বেশিক্ষণ এ ভাবে বুমে-মানুষে টানাটানি সম্ভব নয়। বোঝার চেষ্টা করছি, কতক্ষণে রোষে ইতি পড়বে। নাকি এবার আমার রাস্তায় পড়ে মার খাওয়ার পালা। এমন সময় দু’জন লাঠিধারী পুলিশকর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখে রণে ভঙ্গ দিল প্রায় পনেরো মিনিট ধরে হামলা চালানো লোকগুলো।

খানিক ধাতস্থ হয়ে দেখি এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় রক্তাক্ত। আমার সহকর্মী রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। হাউ হাউ করে কাঁদছে। চশমা ভাঙা। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে সংবাদমাধ্যমের অনভিপ্রেত উপস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দারা সে সব এক জায়গায় জড়ো করে জল বাড়িয়ে দিলেন। যতবার দীপঙ্কর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠেছে। জল বাড়ানো মানুষগুলো বলে উঠেছে, ‘ইস্, কী ভাবে মেরেছে। এটা ভোট!’ আঘাত প্রাপ্ত মনে-চেতনায় মলমের কাজ করেছে সাধারণ ভোটারের এই উপলব্ধি। আর মুখে হাসি ফুটিয়েছে সাত বছরের পুত্র সন্তানের কথাগুলো। শিশুমন বুঝে গিয়েছে, বাজে আঙ্কল কারা! তবে বাজে হলেও তাঁরা যে আঙ্কল শিশুমন তা-ও জানে। বিপরীত অবস্থানে থাকা মানুষও আঙ্কল। তাঁদেরও শ্রদ্ধা জানাতে হয়। সাত বছরের শিশু যে কথা জানে মুখোশ আড়ালে থাকা মুখগুলো তা জানে না। হায় রে গণতন্ত্র!

আরও পড়ুন: Municipal Elections 2022: ‘বিরোধীরা স্নান সেরে ফ্যান চালিয়ে চাদর চাপা দিয়ে ঘুমোক’, ভোট শেষে ‘টিপস’ অনুব্রতর

Next Article