পুজো এলে চুরি ছিনতাই পকেটমারি বেড়ে যায় বলে প্রায়শই শোনা যায়। ট্রেনে বাসে না কি কেপমাররা সুযোগ পেলেই গাঁট কাটে। ফাঁকা বাড়িতে সিঁদ কাটে চোর। এসবই হয়তো হয়, পুজো এলে পুলিশের কাজ বেড়ে যায় বলে। পুজোর সময় ভিড় সামলাতে হয় পুলিশকে। রাস্তাঘাটে বাড়তি নজর দিতে হয়। সেই সুযোগে মহাবিদ্যা ফলায় চোরের দল। তবে এবার মনে হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ আটঘাট বেঁধে তৈরি আছে। পুজো এলেও চোর ধরার কাজটা তাঁরা মন দিয়ে করতে চায়। আসলে, প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকলে সকলেরই তো ভাল পারফরম্যান্স করতে ইচ্ছে হয়। এবছর পুজোর আগে এরাজ্যে চোর, ডাকাত ধরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
সিবিআই-ইডি-র তুলনায় একটু দেরিতে খেলতে নামলেও, পুলিশ কিন্তু ফাঁকা মাঠা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। বরং মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সঙ্গে বেশ একটা হেলদি কম্পিটিশন উপভোগ করছে পুলিশ আর সিআইডি। তাই, ইডি যার বাড়িতে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল। তাঁকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। গার্ডেনরিচের আমির, গ্রেফতার হলেন গাজিয়াবাদ থেকে। আচ্ছা, লোক ঠকিয়ে যিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁকে চোর বলব না ডাকাত বলব? আজ থেকে ঠিক পনেরো দিন আগের কথা। ইডি-র কল্যাণে নতুন নোটের পাহাড় দেখেছিল রাজ্যবাসী। নতুন কারণ, তার আগে দু বার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকার স্তূপ দেখে আমাদের চক্ষু সার্থক হয়েছিল। হরিদেবপুর আর বেলঘরিয়ার পর যখন মনে হচ্ছিল, আর বোধহয় অতগুলো টাকা একসঙ্গে দেখার সুযোগ হবে না, তখনই ফের কামাল করেছিল ইডি।
গার্ডেনরিচে এক ব্যাবসায়ী পরিবারে হানা দিয়ে, আবার নোটের পাহাড়ের খোঁজ পেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শেষ পর্যন্ত জানা গিয়েছিল, ১৭ কোটি ২২ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। মনে আছে তো টাকা গুলো কেমন ভাবে রাখা ছিল? খাটের নীচে, হাঁড়ির মধ্যে তাড়া তাড়া নোট ডাঁই করে রেখেও, নিশ্চিন্তে ছিলেন আমির খান। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধেয় যখন ট্রাঙ্ক ট্রাঙ্ক টাকা গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখন বড় বড় চোখ করে দেখছিলেন গার্ডেনরিচের স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত মানুষ, বিস্ময়ের ঘোর কাটতে তাঁদের সময় লেগেছিল। যে পাড়াতেই হোক না কেন, প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে যদি কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়, তাহলে সকলেই প্রচণ্ড অবাক হবেন। সেটাই স্বাভাবিক। আজ মিঠুন চক্রবর্তীও তো বলেছেন তিনিও জীবনে অত টাকা একসঙ্গে দেখেননি। সে যাই হোক, বিষয় হল, দিন পনেরো পর আমির খান গ্রেফতার হলেও, বিজেপি খুশি নয়। কেন? বিরোধী দলের তো খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতির কথা শুনে কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। সুকান্ত মজুমদার মনে করেন, কলকাতা পুলিশ আসলে, একটা বড় রহস্য আড়াল করতেই আমিরকে গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা যাতে, আমিরকে পাকড়াও করে আরও বড় মাথার খোঁজ না পায়, সে জন্যই কলকাতা পুলিশ অতি সক্রিয় বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি।
আসলে, নেতারা তো দূরদর্শী মানুষ। তাঁরা ভবিষ্যত্ দেখতে পান। কোন তদন্ত শেষে কে বিপদে পড়তে পারেন, সে সব কিছু নেতারা আগে ভাগে আইডিয়া করতে পারেন। তাহলে বাংলার বিজেপি নেতারা কেন বোঝেননি, আজ মিঠুন চক্রবর্তীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে? কুণাল ঘোষ তো মিঠুনকে আজ বিশ্বাসঘাতক বলে দিলেন। নেতাদের এই ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। সবাই সবার হাঁড়ির খবর রাখেন। আসলে, ঘন ঘন দল বদলে তাল মিলিয়ে চলতে হয় বলেই হয়তো, তাঁদের এই পারদর্শিতা তৈরি হয়ে যায়। আচ্ছা আপনাদের, কোনি সিনেমার ওই সিনটার কথা মনে আছে? ওই যে…ফাইট কোনি ফাইট। আজ যেন ক্ষিদ্দা হয়েই বিজেপির হেস্টিংস অফিসে গিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। কর্মীদের চাঙ্গা করতে দাওয়াই দিলেন। বললেন, ফাইট, ফাইট, ফাইট। ক্ষিদ্দার মতোই মহাগুরু তো বললেন। কোনির মতো বিজেপি নেতারা, সেই ভোকাল টনিকে চাঙ্গা হলেন কি? মিঠুনের মুখে সংলাপে আর কবে কাজ হবে? এই প্রথম বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে অংশ নিলেন তিনি। মিঠুন কি জানেন বাংলায় বিজেপির সংগঠনটাই শীর্ষনেতাদের সব থেকে বড় মাথাব্যথা।
এসব নিয়েই কথা হবে। কথা হবে, কী ভাবে সরকারি হাসাপাতালের কল্যাণে দু চোখে অন্ধকার দেখছে জনতা, সে কথাও। কথাগুলো আজ না বললেই নয়। টিভি নাইন বাংলায়, রাত ৮.৫৭